কর্মীর হাত আল্লাহর পছন্দ by জহিরউদ্দিন বাবর

কর্মক্ষম মানুষের জন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন। নিষ্কর্মার হাত থেকে কর্মীর হাত আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। ইসলাম সবসময় কর্মের ব্যাপারে উৎসাহিত করে। কোনো নবী-রাসূল পরনির্ভরশীল ছিলেন না। সবাই পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।


অঢেল সম্পদ ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকেই নিজের কাজ নিজে করেছেন। হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন, হজরত নূহ (আ.) ও জাকারিয়া (আ.) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন, হজরত ইদ্রিস (আ.) কাপড় সেলাই করতেন, হজরত মুসা (আ.) রাখালের কাজ করতেন। এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, এমন কোনো নবী-রাসূল ছিলেন না যিনি ছাগল চরাননি। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) ইচ্ছা করলে কোনো কাজ করা ছাড়াই আয়েশি জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজ হাতে কঠিন ও শ্রমসাধ্য কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। ইহুদির কূপ থেকে খাদ্যের বিনিময়ে পানি তুলে দিয়েছেন। ব্যবসা পরিচালনা করেছেন, ছাগল চরিয়েছেন, সংসারের টুকিটাকি কাজ নিজেই করেছেন। উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন কর্মমুখর জীবনযাপনের। আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলার তাগিদও রয়েছে তার কাজ ও প্রেরণায়।
কর্মক্ষম ব্যক্তির নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকাকে ইসলাম সমর্থন করে না। কোনো মুসলমান কাজ করার শক্তি আছে এবং বাজারে তার শ্রমের মূল্য আছে, এ অবস্থায় ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হওয়া বা আল্লাহর ওপর নির্ভরতার নাম করে রিজিক উপার্জন থেকে বিরত কিংবা বেপরোয়া হয়ে থাকাটাও ইসলাম ভালো চোখে দেখে না। তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর নির্ভরতার তাগিদ ইসলামে রয়েছে। কিন্তু তাওয়াক্কুল মানে এই নয় যে, কাজ না করে হাতের ওপর হাত রেখে আল্লাহর সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকা। তেমনি কাজ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও লোকজনের দান-খয়রাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকাও নিন্দনীয় কাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'দান-খয়রাত গ্রহণ করা কোনো ধনী লোকের জন্য জায়েজ নয়, শক্তিমান ও সুস্থ ব্যক্তির জন্যও জায়েজ নয়।' (তিরমিযী) মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, 'অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হয় তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর দেওয়া অনুগ্রহ (জীবিকা) থেকে অন্বেষণ করো।' _জুমআ : ১০
উলি্লখিত আয়াত ও হাদিস থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, অকর্মা হয়ে বসে থাকা ইসলামে জায়েজ নেই।
রাষ্ট্রের কর্মক্ষম প্রতিটি নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত সমস্যা ও সামর্থ্যের টানাপড়েনের কারণে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও সরকারের পক্ষে তা করা সম্ভব হয় না। এ জন্য ইসলামের নীতি হলো, নিজেকেই কাজ খুঁজে নিতে হবে। সরকার কাজের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো, অন্যথায় ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। আল্লাহর দেওয়া শক্তি ও সামর্থ্য ব্যয় করে নিজেকেই শ্রমের বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে দিন দিন বেকারের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বেকার যুবকরা চরম হতাশায় ভুগছে। অনেকেই বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে সমাজকে বিষিয়ে তুলছে। ইসলামের নির্দেশনামতো যদি তারা যে কোনো কাজে জড়িয়ে একযোগে নিজেদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চেষ্টা চালাত তাহলে সরকারের করুণার চাকরির দিকে তাদের তাকাতে হতো না। এ দেশের শিক্ষিত যুবকদের মানসিকতা হলো, উচ্চ ডিগ্রি নিয়েছি, যে কোনো কাজে জড়ানো যাবে না। প্রয়োজনে বেকার থাকবে। তবুও তারা একটু কম মর্যাদার কাজে যোগ দেবে না। অথচ আল্লাহর রাসূল (সা.) জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ছাগল চরানোর মতো নিচু স্তরের কাজ করেছেন। মুসলমানরা মহান সেই আদর্শ ভুলে যাওয়ার কারণেই আজ তাদের এ অধঃপতন।
নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা সংসার ও সমাজের কাছে যেমন প্রশংসনীয় তেমনি আল্লাহর কাছেও প্রিয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'নিজ হাতে উপার্জনকারী ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা।' অন্য হাদিসে আছে, 'ওই ব্যক্তিই উত্তম যে নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে।' জনৈক সাহাবি রাসূল (সা.)-এর কাছে ভিক্ষা চাইতে এলে রাসূল (সা.) তাকে ভিক্ষা না দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের উপায় করে দিয়েছিলেন। ওই সাহাবি বনে গিয়ে কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সবাই ছিলেন আত্মনির্ভরশীল। সবাই নিজ হাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের জীবন ও আদর্শ থেকেও আমরা আত্মোন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করার প্রেরণা অনুভব করতে পারি।
zahirbabor@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.