কর্তৃপক্ষের চোখের ব্যারাম ছাড়াতে হবে-রাতের আঁধারে গাছ সাবাড়

১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অন্তত তিনটি করে গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে সরকারের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান।


দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক উন্নতি ও পরিবেশ রক্ষায় গাছের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, তাঁর সরকার সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দেশের বনজ সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকার ১০৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এসব কথায় আমাদের আশ্বস্ত হওয়ারই কথা। কিন্তু যখন দেখি দিনের পর দিন অবৈধভাবে গাছ কেটে সাবাড় করে দেওয়া হচ্ছে, আর তাতে অংশীদার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় দুর্বৃত্তরা, তখন আর হতাশ না হয়ে উপায় নেই। গত সোমবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় সরকারি সড়ক ও গ্রাম্য এলাকার কাঁচা রাস্তার পাশ থেকে গত ছয় মাসে প্রায় ১৫ হাজার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে অবাধে গাছ কাটা অব্যাহত থাকার পরও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অবৈধভাবে গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি তাঁর দলীয় পরিচয়ের জন্য পার পাবেন না, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা তো বলছে অন্য কথা। এভাবে অবৈধ গাছ কাটা চলতে থাকলে সামাজিক বনায়ন তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে।
পাঁচবিবির যে গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে সেগুলো আকারে বড় এবং অনেক ভারী। গাছ কেটে নিয়ে গেলে তা চোখে না পড়ার কোনো কারণ নেই। তার পরও যদি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের তা নজরে না পড়ে, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁদের চোখের ব্যারাম। বলা হচ্ছে, রাতের আঁধারে অবাধে গাছ কেটে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না। যেন দিনগুলো আমাদের আর রাতগুলো দুর্বৃত্তদের। এমন কর্তৃপক্ষের জন্য হয়তো সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থাপত্র রাতকানা রোগের দাওয়াই। আমরা আশা করি, সরকার অতিসত্বর এর ব্যবস্থা করবে।

No comments

Powered by Blogger.