রফতানি আয়ে বাড়তি কর-বোঝার ওপর শাকের আঁটি কেন

আগামী অর্থবছরের বাজেটে রফতানি মূল্যের ওপর উৎসে আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে এ ধরনের আয়ের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ হারে কর ধার্য রয়েছে এবং তা বাড়িয়ে দেড় শতাংশ করা হবে। চলতি অর্থবছরে দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের মতো হবে বলে আশা করা যায়।


এটা সবার জানা যে, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য খাত হচ্ছে পাট ও হিমায়িত মাছ। আয়ের ওপর বাড়তি কর রফতানিকারকদের ওপর বোঝা হিসেবেই গণ্য হবে। বুধবার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের সঙ্গে যুক্তদের তিনটি প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ আয়ের ওপর থেকে বাড়তি কর আদায়ের প্রস্তাব রদ করার জন্য আবেদন জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। চলতি অর্থবছরে রফতানি আয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় নতুন বছরের বাজেটে রফতানিকারকদের কাছ থেকে বাড়তি কিছু অর্থ আদায়ের বিষয়টি হয়তো অর্থমন্ত্রী বিবেচনা করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। বুধবার উলি্লখিত তিনটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি আগামী অর্থবছরে কমে যেতে পারে, এমন শঙ্কা রয়েছে। এর একটি কারণ উন্নত বিশ্বের অর্থনীতিতে চলমান মন্দাভাব। দ্বিতীয় কারণ, রফতানি বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভারত, পাকিস্তান ও চীন রফতানি আদেশ বাড়ানোর জন্য 'প্রাইস কাট' কৌশল অনুসরণ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের রফতানিকারকরা গ্যাস ও জ্বালানি সমস্যার জন্য একই পথ অনুসরণ করতে পারছে না। তদুপরি, আমাদের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে নিজস্ব কাঁচামাল ভিতের দুর্বলতা। ভারত, পাকিস্তান ও চীনের বস্ত্র শিল্প সমৃদ্ধ। এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা। কিন্তু বাংলাদেশ তার সুতা, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূল কাঁচামাল সুতা ও বস্ত্রের সিংহভাগ আমদানি করে থাকে। তাদের পক্ষে বাজার ধরে রাখা ও সম্প্রসারণের জন্য চাইলেই প্রাইস কাট কৌশল অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্যের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পুরোটাই দেশে পাওয়া যায়। তবে এ শিল্প শ্রমঘন এবং উৎপাদন ব্যয় সীমিত রাখা কঠিন কাজ। এ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবে রফতানির মূল্যের ওপর উৎসে আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। বর্তমানে সবচেয়ে সংগঠিত শিল্প হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। এ শিল্পে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববাজারে সংকটের কারণে সরকার এ শিল্পের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল তার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি রয়েছে। এটা পূরণ না করে উৎসে করের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রায় চারগুণ করার যুক্তি থাকতে পারে না। উৎসে কর দেড় শতাংশ_ এ পরিমাণ তেমন বেশি মনে হয় না। কিন্তু রফতানি খাতের সঙ্গে যুক্তদের নানাবিধ ব্যয়ের সঙ্গে তা যুক্ত হলে সেটা বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে উঠবে। এর পরিবর্তে সরকারের বরং উচিত হবে উৎসে আয়করের হার আগের মতো শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। তাতে রফতানি আয় বাড়বে এবং এ কারণে এর সঙ্গে যুক্ত শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করবে, যা নিশ্চিত করবে বাড়তি কর্মসংস্থান।

No comments

Powered by Blogger.