কোথায় নয়, কী বলেছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ by এমাজউদ্দীন আহমদ

মত দ্বিমত বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার সংসদের বাইরে একটি বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। সংসদে জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের আগে এই বিকল্প বাজেট পেশ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দুটি লেখা ছাপা হলো।


বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে যেসব প্রস্তাব করেছেন তা যেমন ইতিবাচক তেমনি গঠনমূলক।
সংসদীয় ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনায় সরকার ও বিরোধী দলের যৌথ ভূমিকাই প্রত্যাশিত। যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকার ও বিরোধী দলের মতামত প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতএব এ সম্পর্কে বিরোধী দল কিছু বলবে না তো তা হয় না।
স্বীকার করি, সংসদে বিরোধী দল তাদের প্রস্তাবনা পেশ করলে আরও ভালো হতো। কিন্তু কোনো কারণে বিরোধী দল যদি সংসদে না যায় তাহলে সে জায়গা শূন্য থাকতে পারে না। বর্তমানে সংসদে সুষ্ঠু পরিবেশ আছে তা বলা যাবে না। সেখানে যেসব অরুচিকর কথাবার্তা হয় তা পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে হয় না। অতএব বিরোধীদলীয় নেত্রী কোথায় বাজেট নিয়ে প্রস্তাব রেখেছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি কী বলেছেন। তাঁর প্রস্তাবগুলো যুক্তিপূর্ণ হলে গ্রহণ করতে বাধা কোথায়?
যেভাবেই প্রস্তাবটি উত্থাপিত হোক না কেন, এর মাধ্যমে বিরোধী দল এক বছরের আয়-ব্যয়, উন্নয়ন ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের মতামত রেখেছে, বেশ কিছু গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়েছে। তারা কিন্তু সরকারের বাজেট প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। বাজেট পেশের পরও তারা প্রস্তাব রাখেনি। সংসদে বাজেট পেশের আগেই তারা সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সরকারের উচিত বিরোধী দলের যুক্তিসংগত প্রস্তাবগুলো আমলে নেওয়া ও গ্রহণ করা।
অনেকে বলবেন, বিরোধী দল সংবাদ সম্মেলন না করে সংসদে গিয়ে প্রস্তাবগুলো দিতে পারত। সে সুযোগ তো এখনো আছে। স্পিকার বিরোধী দলকে সংসদে আহ্বান জানাতে পারেন। সরকারি দল বলতে পারে, আপনারা প্রস্তাব দিয়েছেন, এখন সংসদে এসে আলোচনা করুন। সংসদীয় ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর প্রায় ২০ বছর চলে গেছে। কিন্তু আমরা সংসদীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পারিনি। এ পরিস্থিতিতে বিরোধী দল কোথায় প্রস্তাবটি রেখেছে তা নিয়ে অযথা বিতর্ক না করে তাদের বক্তব্য গুড গেরেস হিসেবেই নেওয়া উচিত।
বিরোধী দল বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়নি। তারা তথ্য-প্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এগুলো রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় নয়। অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা। এসব প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না।
উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, বিরোধীদলীয় নেত্রী বাজেটে করের আওতা না বাড়িয়ে ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের কথা বলেছেন, দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। এ ধরনের প্রস্তাব তো অর্থনীতিবিদসহ অন্যান্য পেশার মানুষও করেছেন। তাহলে বিরোধী দলের প্রস্তাবকে বাঁকা চোখে দেখার কী আছে?
শিক্ষা খাতের উন্নয়নেও তারা বেশ কিছু ভালো প্রস্তাব দিয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এক সন্তানের পরিবারের জন্য মাসে ৫০০ টাকা প্রণোদনা ভাতা দেওয়ার কথা বলেছে। সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। পিলখানা ট্রাজেডিতে বহু দক্ষ সেনা কর্মকর্তাকে আমরা হারিয়েছি। তাঁদের স্থান পূরণ করতে হলে সেনাবাহিনীতে সুদক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশের সব অঞ্চলে সুষম উন্নয়নের কথা বলেছেন, প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন তাকে বাঁকা চোখে দেখার সুযোগ নেই। পুলিশ বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের দলীয়করণ না করার কথা বলেছেন। এটি যেকোনো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই সমর্থন করবেন।
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ: শিক্ষাবিদ। সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.