অপরাজিত

টানা ৩৮ ম্যাচ অপরাজিত থেকে সিরি ‘আ’র শিরোপা জিতেছে জুভেন্টাস। ইউরোপীয় ঘরোয়া লিগে টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ড আরও বেশি। লিখেছেন ইফতেখার আহমেদ ‘ওল্ড লেডি’রা এখন আরও সুন্দর! মুখের বলিরেখা ধুয়েমুছে সাফ। পুরো মৌসুম অপরাজিত থেকে সিরি ‘আ’ চ্যাম্পিয়ন,


ফাইনাল খেলেছে কোপা ইতালিয়ারও—এই রৌদ্রোজ্জ্বলতায় কেটে গেছে ম্যাচ পাতানোর কালো মেঘটা। কোপা ইতালিয়া জিতে টানা ৪৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়া না হলেও নতুন ভোর তুরিনের ক্লাবটিতে। সিরি ‘আ’র শিরোপাটা যে পুনরুদ্ধার করা গেছে নয় বছর পর। এর আগেও পুরো মৌসুম অপরাজিত থেকে এসি মিলানের সিরি ‘আ’ জয়ের কৃতিত্ব আছে দুবার। তবে ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে মিলান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময় টুর্নামেন্টটা ছিল ১৬ দলের। আর ১৯৯১-৯২-এ ফ্যাবিও ক্যাপেলোর মিলান অপরাজিত ছিল ১৭ দলের সিরি ‘আ’ তে। ২০ দলের লিগ হওয়ার পর এবারই প্রথম মৌসুমে ৩৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছে জুভেন্টাস। তবে ইউরোপিয়ান ফুটবলে জুভেন্টাসের চেয়েও অনেক বেশি ম্যাচ টানা অপরাজিত থাকার কীর্তি আছে অনেকের। ফিরে দেখা যাক, স্বর্ণালী সেই কীর্তিগুলো।
স্টুয়া বুখারেস্টের নামটাই আসবে আগে। মেসি-জাভিদের বার্সেলোনাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা দল মনে করেন অনেকেই। তবে ১৯৮৬-এর জুন থেকে ১৯৮৯-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোমানিয়ার ক্লাবটির যা অর্জন, তাতে হাইওয়েতে চলা সুপারবাসের সঙ্গে ট্যাক্সির তুলনাতেই পড়বে অন্যরা! কেননা এই তিন বছর তিন মাসে তারা লিগে অপরাজিত ছিল টানা ১০৪ ম্যাচ! বার্সেলোনার মেসি-সানচেজদের মতো ভিনদেশি ছিল না বুখারেস্টের। রোমানিয়ার স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়েই ওই অবিশ্বাস্য সাফল্য। ওই স্বপ্নযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কিংবদন্তি গিওর্গি হ্যাজি। টানা তিন মৌসুম অপরাজিত থেকে রোমানিয়ান লিগ জয়ের পথে স্টুয়া বুখারেস্ট জিতেছিল ৮৬ ম্যাচ আর ড্র করেছিল ১৬টিতে।
অনেকে বলতে পারেন, রোমানিয়ান লিগ দুর্বল বলেই ওই সাফল্য। কথাটা ধোপে টিকবে না। কারণ এই দলটিই ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগ) জিতেছিল ফাইনালে বার্সেলোনাকে হারিয়ে। ফাইনালে উঠেছিল ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমেও। আরিগো সাচ্চির দুর্দান্ত এসি মিলানের সঙ্গে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে আর পেরে ওঠেনি স্টুয়া। রোমানিয়ার আকাশ ফুঁড়ে ইউরোপিয়ান মহাকাশে এই উড্ডয়নে নিশ্চয়ই কেউ বলবে না, ইউরোপিয়ান কাপও দুর্বল!
স্টুয়ার পর ইউরোপিয়ান ঘরোয়া লিগে টানা ৬৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড মলদোভার দল এফসি শেরিফ ও ৬২ ম্যাচ স্কটল্যান্ডের সেল্টিকের। তবে শৌর্যে অনেক এগিয়ে থাকায় আলোচনা করা যেতে পারে ৫৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকা এসি মিলানের ‘স্বপ্নের দল’-এর কথা। ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ছিল ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত সিরি ‘আ’ তে এই কীর্তি গড়া ফ্যাবিও ক্যাপেলোর দলটি। ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন আরিগো সাচ্চিই। ক্যাপেলো তাতে ইমারত গড়েন ১৯৯১-৯২ মৌসুমের শুরুতে দায়িত্ব নিয়ে। সে সময় ম্যারাডোনা, বাতিস্তুতা, জোলা, কারেকার মতো তারকারা ইতালিতে খেলায় সিরি ‘আ’ই ছিল ইউরোপের সবচেয়ে জমজমাট আর কঠিন আসর। অথচ কঠিন সেই লিগটাই কত সহজ মনে হচ্ছিল তিন ডাচত্রয়ী বাস্তেন-রাইকার্ড-খুলিতের দাপটে। সিরি ‘আ’র সিংহাসনে বসাটা মিলানের আরও সহজ হয়ে যায় মালদিনি, বারেসি, ডোনাডুনির মতো তারকাদের ঔজ্জ্বল্যে। স্বপ্নের সেই দল ১৯৯১-৯২ মৌসুমের সিরি ‘আ’ তে জিতেছিল ২২টি ম্যাচ, ড্র করেছিল ১২টিতে। পরের মৌসুমে নিজেদের মাঠে সেবারই সিরি ‘আ’তে উন্নীত পারমার কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হারার আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এই জয়যাত্রা।
এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ছয়টি শিরোপা জয়ের কীর্তি রয়েছে বার্সেলোনার। পেপ গার্দিওলার দায়িত্ব নেওয়ার সেই প্রথম মৌসুমেও কিন্তু অপরাজিত থেকে লা লিগা আর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি কাতালানরা। ঘরোয়া লিগের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ফুটবলেও ‘কমলা-ঝড়’ তুলে একমাত্র দল হিসেবে এই কীর্তি করতে পেরেছে আয়াক্স। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ডাচ লিগে টানা ৫২ ম্যাচ অপরাজিত ছিল লুইস ফন গালের দল। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে ডাচ লিগে ২৭ জয় ও ৭ ড্রয়ে তাদের গোল ব্যবধান ছিল +৭৮! রাইকার্ড, ক্লাইভার্ট, সিডর্ফ, ফন ডার সারদের দল ১০৬ গোল করে খেয়েছিল মাত্র ২৮টি। তবে চাঁদের কলঙ্কের মতো ১৯৯৪-৯৫-এর ‘পারফেক্ট’ মৌসুমেও ডাচ কাপে একটা হার ছিল অন্য গ্রহের দল হয়ে ওঠা আয়াক্সের। কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে তারা হেরে বসে ফেইনুর্দের কাছে।
স্টুয়া বুখারেস্ট, আয়াক্স, মিলানের কাতারে আসতে পারে আর্সেনালের নামও। ২০০৩-০৪ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাদের না হারার গাড়িটা থামে ৪৯ নম্বর জংশনে। যে অঁরি-বার্গক্যাম্প-ভিয়েরা-তোরে-ক্যাম্পবেলদের নিয়ে আগের মৌসুমে নৌকাডুবি হয়েছিল, তাঁরাই কিনা এক মৌসুম পর হয়ে গেলেন ‘অপরাজেয়’। ২০০৩-০৪ মৌসুমে আর্সেনালের অপরাজিত থাকার কীর্তিটা আরও বেশি করে চোখে পড়ার কারণ, সেই মৌসুমে লিগের প্রতিটা দল হেরেছিল অন্তত ৭টা করে ম্যাচ!

No comments

Powered by Blogger.