নিশ্চিত হোক ভোক্তা অধিকার

গতকাল মঙ্গলবার পালিত হলো বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল 'ভোক্তার জন্য সুষ্ঠু আর্থিক সেবা'। আমাদের দেশে ভোক্তা অধিকার সেভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে না। ভোক্তারাও তাদের অধিকার নিয়ে সেভাবে সচেতন নয়। তার পরও অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটি আইন করা হয়েছে।


কিন্তু ভোক্তাদের সে সম্পর্কে সচেতন করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষিত না হলে পদে পদে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশে তেমনটি হয়েও থাকে। অর্থের কোপ শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে ভোক্তার ওপরই। কিন্তু সচেতনতার অভাবে ভোক্তা যেমন তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে না, তেমনি বঞ্চিত হয় তার ন্যায্য অধিকার থেকে।
ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে গত শতকে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তোলার পর থেকে অন্যান্য দেশেও ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। পাশাপাশি উন্নয়নশীল এবং উন্নয়নকামী দেশগুলোতেও ভোক্তা অধিকারের ধারণাটি পরিচিত হতে থাকে। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি নিয়ে একটি ধারণা দিলে ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পায়। জাতিসংঘের ধারণাপত্রে বলা হয়, 'আয় কিংবা সামাজিক অবস্থান যা-ই হোক না কেন ভোক্তা হিসেবে সবারই অধিকার আছে।' গত শতকেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ একটি আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পায়। ভোক্তারও যে একটি অধিকার আছে, এ ধারণাটি সবার কাছে পেঁৗছে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে ২৫০টিরও বেশি সংগঠন কাজ করছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে, যদিও বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষিত হচ্ছে না। ভোক্তার প্রধান দুটি অধিকার হচ্ছে নিরাপত্তা ও প্রতারিত না হওয়ার অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে ভোক্তাদের প্রায় পদে পদেই প্রতারণার শিকার হতে হয়।
বাংলাদেশে ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব ও অশিক্ষা। শিক্ষার হার না বাড়লে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি হবে না। ভোক্তা সচেতন না হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। ভোক্তাকে যেকোনো পণ্য কেনার আগে তার গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ভোক্তা সচেতন হলে প্রতারণার সুযোগ অনেকাংশেই কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভোক্তা কোনো জিনিস কেনার আগে সেই জিনিসের তৈরি সময় ও তা ব্যবহারের সময় দেখার প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রতারিত হয়। আবার পণ্যের দাম, মান ও বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাজারজাতকারীর। যারা পণ্য বাজারজাত করছে, তাদের এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। আবার সেটি সঠিকভাবে করা হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশের মতো দেশে দেখা যায়, ক্রেতাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই ভোক্তাদের প্রতারিত করে, এটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে ক্রেতা তথা ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ২০০৯ সালে যে আইনটি হয়েছে, সেটির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত
করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.