আগের বক্তব্য থেকে সরে মঞ্জুর পক্ষে জামায়াত

আট-নয় দিন আগেও আলাদা নির্বাচন করবে বলে গণমাধ্যমের কাছে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন নগর জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম। আর জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন করবেন জেতার জন্য—এমন মনোভাবও ব্যক্ত করেছিলেন তিনি।


এখন আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে মঞ্জুর পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। গত সোমবার সকালে চন্দনপুরার দলীয় কার্যালয়ে বিএনপিসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শামসুল ইসলামসহ জামায়াতের নেতারা। এরপর তাঁরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন।
সূত্র জানায়, একক প্রার্থী মনোনয়ন ও ঐক্যবদ্ধভাবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন করতে আট-নয় দিন ধরে দেনদরবার চলছিল বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিএনপিসহ জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মোকাবিলা করতে একক প্রার্থীর কোনো বিকল্প নেই বলেও জোটের নেতারা মনে করছিলেন। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম থেকে ১০ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোটবদ্ধভাবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ও একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে আমরা প্রক্রিয়া শুরু করি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্ব্যবহার থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে হবে। তাই জোটবদ্ধভাবে আমরা মঞ্জুরের পক্ষে কাজ শুরু করেছি। তিনি ভালো মানুষ। তাঁকে জিতিয়ে আনতে এ জোট গঠন করা হয়েছে।’
১০ দলীয় জোট গঠনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মঞ্জুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত রয়েছে। যাঁরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে তাঁদের আমি স্বাগত জানাই। এ মুহূর্তে পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ-ও যদি আমাকে সমর্থন দেয় আমি তাঁদের স্বাগত জানাব। কারণ নগরবাসী পরিবর্তন চায়। এ পরিবর্তনের জন্য লোকজন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।’
সোমবার ১০ দলীয় জোটের সংবাদ সম্মেলনের আগে ছাত্রদলের সাবেক ছাত্রনেতাদের সংগঠন ‘সাবেক ছাত্রনেতৃবৃন্দ ফোরাম’-এর ব্যানারে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলন থেকে মঞ্জুরকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা আসে। পাশপাশি এতে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কঠোর সমালোচনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজিমুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীসহ একাধিক সাবেক ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন।
তবে ১০ দলীয় জোট গঠনের সমালোচনা করে নগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মঞ্জুর আলমের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল ছিল। সুশীল সমাজ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীবিরোধী একটি বিশাল গোষ্ঠীর ভোট মঞ্জুর টানতে পারতেন। জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে মঞ্জুরকে সমর্থন দেওয়ায় সুশীল সমাজ ও মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরোধীদের ভোট মঞ্জুর টানতে পারবে কি না আমার সন্দেহ আছে। নগরবাসী মঞ্জুর প্রতি জামায়াতের সমর্থন ভালোভাবে নেবেন না।’
সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নগর আমির ও সংসদ সদস্য শামসুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, নগর বিএনপির সহসভাপতি দস্তগীর চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) জাহাঙ্গীর আলমসহ ১০ দলীয় জোটের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (মতিন), খেলাফত মজলিশ, নেজামে ইসলামী পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাগপা ও মুসলিম লীগকে নিয়ে ১০ দলীয় জোট গঠন করা হয়।
এদিকে, বিএনপির সব পক্ষের নেতারা এক মঞ্চে না আসা এবং আলাদাভাবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের বিষয়টি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুকের নজরে এসেছে। গত রোববার দুপুরে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
জয়নাল আবেদীন ফারুক এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নোমান ভাই, খসরু ভাই ও মীর নাছির ভাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আমাদের সমর্থিত প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তাঁদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’

No comments

Powered by Blogger.