নিমতলী শোকগাথা-অগ্নিকাণ্ড না হত্যাকাণ্ড by মিজানুর রহমান খান

বেগুনবাড়ির বিয়োগান্তক ঘটনার পর নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা শোক দিবস পালন করছি। কিন্তু এই শোক আমরা ভুলে যাব। আরও শোকাবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এ কথা সবারই জানা, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। উন্নত দেশেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেখানেও ব্যাপক প্রাণহানি হয়।


কিন্তু বেগুনবাড়ির ভবন ধসে পড়া কিংবা নিমতলীতে লাশের মিছিলের ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ কতটা, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এই হূদয়বিদারক ঘটনা যদি আমাদের জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনকে আন্দোলিত করে, তাহলে সেটাই হবে অর্জন। শোকে মাতম চাই, শুধু মাতম চাই না। মাতম দিয়ে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা চাই না। দরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে নিজ কর্তব্য, দায়িত্বশীলতা ও অনুশোচনাবোধ জাগ্রত হওয়া। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত এ ধরনের কোনো আন্দোলনের অনুরণনের ইঙ্গিত আমরা পাইনি।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী মধ্যরাতে দুর্গত নিমতলীতে ছুটে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধারকাজের সুষ্ঠু তদারকি হয় কি না, সেদিকে বিশেষ নজর রেখেছেন। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উদ্ধারকাজে কোনো গাফিলতি হচ্ছে কি না, সেদিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। কিন্তু তাঁরা কেউ বলেননি, এ নিয়ে সংসদে আমরা আলোচনা করব। একটা সমাধান খুঁজে বের করব।
আমরা গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করি বলে দাবি করি। সেখানে পর পর দুটি বিপর্যয় ঘটল। নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলার দিকটিই ফুটে উঠল। হতাহত ব্যক্তিরা মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্নীতির নিষ্ঠুর শিকার। তাঁরা ঠিকই খাজনা দিচ্ছিলেন। কর দিচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁরা প্রাপ্য সেবা পাচ্ছিলেন না। তাঁরা তদারকির বাইরেই থাকছিলেন। হয়তো অনেকের জীবন কষ্টেক্লিষ্টে কাটছিল। ঢাকায় মানুষে চাপ বাড়ছে, কিন্তু তার সঠিক পরিসংখ্যান কী। পুরুষ কত। নারী কত। ১০ বছর পর রাজধানী ঢাকার চেহারা কী হবে। নানা সমীক্ষার কথা আমরা শুনি। কিন্তু নেতারা এতে উদ্বিগ্ন নন। জনসভায় তাঁদের লোক চাই। মিছিলে মানুষ চাই। বাক্সে ভোট চাই। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম ঢাকা। প্রতি বর্গকিলোমিটারে দুই লাখ লোকের বাস। কিন্তু হিসাব আরও আছে। বিশ্বে যাঁরা এসব নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা এখন দেখাচ্ছেন ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে কোন উপশহর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। দেখি, ঢাকার কোতোয়ালি শীর্ষ দশে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক লাখ এক হাজার ৬৯৩ জন। সূত্রাপুরও শীর্ষ দশে। ৭০ হাজার ২০২ জন। এই সন্দেহ হয়তো অমূলক হবে না যে, বেগুনবাড়ি ও নিমতলীর মতো অনেক পকেট আছে, যেখানে হয়তো এই ঘনত্ব আরও প্রকট। বিশ্বে এমন অনেক রাষ্ট্র আছে, যার জনসংখ্যার সঙ্গে হয়তো এ রকম কোনো পকেটের লোকসংখ্যা তুলনীয়। তাই কোনো বর্গকিলোমিটারে দুই লাখ, কোথাও পাঁচ লাখ থাকলে তো বিশৃঙ্খলা ঘটবেই। বেগুনবাড়ির একটি ভবন ধসে এত মৃত্যু যে হলো, সে জন্য অপরিকল্পিত বসবাস বহুলাংশে দায়ী। সংকীর্ণ রাস্তা। গায় গায় দালান-বস্তি। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা কাজ করতে পারেননি। তাই মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। এ রকম পকেট কম নয়। যেখানে দুর্ঘটনা হানা দেয়। দেবে। উদ্ধারকর্মীরাও অসহায় বোধ করবেন। নিমতলীর বিদ্যুৎ ফাও ছিল না। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রান্সফরমারের যত্নআত্তি কি ঠিকঠাক ছিল। কেন আগ্নেয়গিরির লাভার মতো ঝলকানি দেখল নিমতলীর মানুষ। নিতান্ত হেলাফেলার মধ্যে তাদের প্রাত্যহিক জীবন কাটছিল। এরপর হলো তারা পাইকারি হতাহতের শিকার। এটা এক ধরনের হত্যাকান্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। এর দায় রাষ্ট্রের, রাষ্ট্র পরিচালনা করে যে সরকার তার।
যুক্তরাষ্ট্রের এক নাইটক্লাব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ড্যানিয়েল মিশেল ‘অনিচ্ছাকৃত নরহত্যার’ দায়ে দণ্ডিত হন। বেইজিংয়ের আদালত গত মাসেই ২০ ব্যক্তিকে টিভি স্টেশন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনধিক সাত বছর করে জেল দেন। এর মানে হলো, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমরা তা স্বীকার করি না। রাষ্ট্রের অবহেলায় জনগন মারা যাবে কিন্তু তার জন্য কাউকে শাস্তি পেতে হবে না। সরকারগুলো নিজেদের অপশাসনকে আড়াল করবে। নানা ফন্দিফিকির করবে। আল্লার মাল আল্লায় নেওয়ার তত্ত্ব প্রচার করবে। আমরা বেশ বুঝতে পারি, এটাই আসলে শাসকগোষ্ঠীর চিরস্থায়ী দর্শন। গার্মেন্টসে বা বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় বিপুলসংখ্যক প্রাণহানিও প্রকারান্তরে এক ধরণের হত্যাকান্ড। আহাজারির রাশ টেনে এ কথা এখন বলার সময় এসেছে। এধরণের ঘটনার শিকার হন যারা, তাদেরকে আসলে মানুষ হিসেবে কতটুকু বিবেচনা করা হয় সে সংশয় খুবই স্বাভাবিক। কারণ এদের নিয়ে কোনো জনসভায়ও কখনো কিছু শুনি না। তাদের নিরাপত্তার জন্য সংসদে কোনো আলোচনা হয় না। ওয়াকআউট হয় না। হরতাল হয় না।
বেগুনবাড়ির উপড়ে পড়া বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল টাকা কামানোর জন্য। এমন বাড়ির ওপর জারিপ হবে, সে কথা কেউ বলেনি। এতে কম বিনিয়োগ বেশি মুনাফা। নিমতলীতে সভ্যতা ঢুকেছিল কিন্তু অনেক আগে। মোগল শাসনের শেষদিকে ১৭৬৫-৬৬ সালে নিমতলী প্রাসাদ তৈরি হয়েছিল। ১৭১৭ সালে সুবা বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে নেওয়া হয়। নিমতলী হয় নায়েব নাজিমের (ডেপুটি গভর্নর) বাসস্থান। আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারিনি। পর্যটনকেন্দ্র নয়, বানিয়েছি ভয়াল মৃত্যুকূপ। দারিদ্র্যই বাধা ছিল না। ছিল অব্যাহত অপশাসন।
দুটি উদাহরণ দেব। আগুন লাগা দুর্ঘটনা হলেও জনপ্রতিনিধিরা কী ভাষায় কথা বলেন, সেটা আমরা দেখতে পারি। গত ডিসেম্বরে আগুন লাগল রাশিয়ার পার্ম অঞ্চলে। একটি নাইটক্লাবে। নিহতের সংখ্যা নিমতলীর কাছাকাছি। ১২৪। আঞ্চলিক সরকারের প্রধান ওলেগ চিরকুনভ পদত্যাগ করলেন। সরকার বিবৃতিতে বলল, তদন্ত শেষ হলেই গঠিত হবে নতুন সরকার। ব্যবসা-বাণিজ্য, নগর উন্নয়ন ও জননিরাপত্তাবিষয়ক তিন মন্ত্রী চাকরি খোয়ালেন। অথচ তাঁদের কোনো প্রত্যক্ষ ও নির্দিষ্ট দায় ছিল না। আমাদের এখানে দুর্ঘটনার ধরন যেমনই হোক, কাউকে দায়িত্ব নিতে হয় না। নিতে বলার মতোও কেউ থাকে না। আমাদের দেশে এধরণের ঘটনার পর সরকারের তরফে একটি মাত্র বিধিবদ্ধ শব্দ আমরা শুনতে পারি যা কার্যত প্রতারণাপূর্ণ। সেটি হলো ‘সুষ্ঠু তদন্ত’। কিন্তু এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পর অন্য দেশে কী হয় তা আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদভ তাঁর সলিসিটর জেনারেলকে (আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল) নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। ওই নাইটক্লাব ছিল মাত্র ৫০ জনের উপযোগী। নিমতলীর মতো ভবনটি বেআইনি ছিল না। কিন্তু একটি দেয়াল নির্মাণ বেআইনি ছিল এবং সেটাই মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আয়োজকেরা আহাম্মক ছিল ঠিকই। কিন্তু এ ঘটনায় প্রত্যেকের দায়দায়িত্ব আলাদাভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এর তিনটি দিক আছে—ফৌজদারি, প্রশাসনিক ও দেওয়ানি। এবং সেভাবেই দায় চিহ্নিত করতে হবে। রাজ্য সরকার তো বটেই, ফেডারেল সরকারের সংস্থাগুলোকেও জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।’ রুশ সরকারপ্রধানও এমনই জাতীয় শোক দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা গতকাল শোক দিবস পালন করেছি। নেহাত বিলাপ। অথচ নিমতলীগাথারও ওই তিনটি দিক আছে। আমরাও এসব দিকের উদ্ঘাটন চাই।
পার্মের ওই নাইটক্লাব হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রতিটি পরিবার চার লাখ রুবল (১৩,৪০০ ডলার) পেয়েছে। নিমতলীবাসী পেল মুফতে চিকিৎসা। তারা পেল নিরাপদ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার গ্যারান্টি। অবশ্য এটাও কম কিসে। দিমিত্রি বলেছেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডে যাদেরই গাফিলতি প্রমাণিত হবে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। প্রতিরোধমূলক সব ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে এ ধরনের বিপর্যয় আমরা রোধ করতে পারব না।’ উচ্চারণের ফারাকটা লক্ষণীয়, কিন্তু তা কাকতাল নয়। আমাদের দুই দলের শাসকগোষ্ঠী ও তাদের মিত্রজীবীরা এ ধরনের কোনো উচ্চারণের ধারেকাছেও যায়নি।
ঘরের কাছে আসি। গত মার্চের ঘটনা। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্ট। এখানেও পুরো কোর্ট ভবন বেআইনি ছিল না। কিন্তু যে দুই ফ্লোরে আগুন লাগে, তা অবৈধ ছিল। মৃত্যু ঘটে ৩৪ জনের। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির মন্তব্য লক্ষ করুন। মুখ্যমন্ত্রী দুর্ঘটনার পরপরই বিধানসভায় বলেন, ‘ভবনটির ওপরের দুই ফ্লোর অবৈধ ছিল। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ভূমিকা কী ছিল তা আমরা খতিয়ে দেখব।’ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোয় লিখেছেন, নিমতলীতে বহুতল ভবন নির্মাণের কোনো সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ ওটা পরিণত হয়েছিল ‘কিনু গেয়ালার গলিতে’। সেখানে কী করে অত বড় গাদাগাদি ভবন উঠল, সে বিষয়ে টুঁ শব্দটি শোনা যায়নি। রাজউক কোনো বিবৃতি দেয়নি। যে মালিকেরা বেগুনবাড়িতে উপড়ে যাওয়া, ধসে পড়া ভবন বানায়, নদী দখল করে, আনফিট গাড়ি কি লঞ্চ বানায়, তারা পয়সা দিয়ে সব জায়েজ করে নেয়। এই হলো বাংলাদেশের অপশাসনের প্রকৃত অর্থনীতি। এই জরাগ্রস্ত অর্থনীতি ও তার নীতিনির্ধারকেরা বাংলাদেশটা চালাচ্ছে। এর কোনো বাজেট থাকে না। বাজেট লাগে না। এর সূত্র এক। ডালপালা বহু। যত কাটবেন তত মাথা গজাবে।
আগুন লাগলে বুদ্ধদেববাবু সোজাসাপ্টা যা বলেন, সে কথা আমাদের এখানে হুবহু খাটে। তিনি বলেন, ‘কলকাতা নগর অবৈধ ভবন নির্মাতাদের খপ্পরে। এর সঙ্গে প্রশাসন জড়িত।’ দিমিত্রির সুরেই বুদ্ধদেব আরও বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আমরা বিপর্যয়ের এই ধারা রোধ করতে পারব না।’ এ কথা আমাদের শাসকেরা বলেন না। বলতে পারেন না। আজ নাগরিকদের এটাই বুঝতে হবে। চোখ মুছে চোখ খোলার সময় এসেছে।
বুদ্ধদেব ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা এবারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেব। আমরা এই দুর্ঘটনা থেকে পাঠ নিয়েছি। এর পুনরাবৃত্তি রোধে এখনই হস্তক্ষেপ করতে হবে।’ এবার দেখুন সেখানকার বিরোধীদলীয় কণ্ঠস্বর। মমতার কথায়, ‘রাজ্য সরকারের অভ্যন্তরীণ তদন্ত হবে একটি আইওয়াশ। তাই আমি বিচার বিভাগীয় কিংবা সিবিআই দিয়ে তদন্ত চাই। যাদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে, তার দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করতে হবে।’ আমাদের প্রকৃতই কোনো বিরোধী দল থাকলে ঠিক এ কথা বলার লোক থাকত। আর প্রণব মুখার্জি বললেন, ‘যাদের জীবন গেছে তো গেছে, এমনটা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য সব ধরনের বিচ্যুতি ও ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আমরা নিমতলী ও বেগুনবাড়ির ঘটনায় পৃথক বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। অন্যভাবেও হতে পারে। তবে তদন্ত কমিটির প্রধান অবশ্যই শ্রদ্ধেয় হবেন। সরকারযন্ত্রের বাইরের কেউ হবেন। নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত হতে পারে। তবে শর্ত হলো, সরকারকে চাইতে হবে। এ ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি রোধে নাগরিক সমাজকে জেগে উঠতে হবে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের একটি নাইটক্লাবে ২০০৪ সালে অগ্নিকাণ্ড ঘটল। মারা গেল ১৯৪ জন। সরকার এর বিচার করতে চায়নি। এমনকি বাইরে ভ্রমণরত সরকারপ্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি। মানুষ ফুঁসল। নাগরিক সমাজ জাগল। শহরের মেয়রকে মেয়াদের আগেই বিদায় নিতে হলো। ওই ক্লাবের মালিকেরা কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর পরে দণ্ডিত হলেন। ক্লাবের মালিক ২০ বছর ও ম্যানেজার ১৮ বছর জেল পেলেন। নাগরিকেরা জয়ী হল।
গতকাল শনিবর খবর দেখলাম, বেগুনবাড়ির ধসে পড়া দ্বিতীয় বাড়িটির মালিক পলাতক। ম্যানেজার গ্রেপ্তার। কিন্তু তাঁদের বিচার হবে কি। সড়ক ও লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটে। আগেই বলেছি, সড়কে কিংবা নৌপথে যত টাকা খাটে, সেখানেও কালো টাকা। আমাদের ‘গোত্র গণতন্ত্র’, কথাটি ফরাসি দৈনিক লা মঁদের কাছ থেকে ধার করা, সেই গোত্র গণতন্ত্রের সুতো আছে সেখানেও। তাই সড়ক বা বড় লঞ্চডুবি বা বাড়ি কি গার্মেন্টস দুর্ঘটনায় মানুষের লাশের মিছিল হোক না যতই দীর্ঘ, কোথাও কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আসে না। এর বড় কারণ গোত্রধর্মী মূল রাজনৈতিক স্রোতধারায় কালো টাকা ও অবৈধ ক্ষমতার এই যে পাকচক্র, তা থেকে বেরোনোর কোনো অঙ্গীকার নেই। কোনো প্রস্তুতি নেই।
নাগরিক সমাজ চাইলে নিমতলীর মর্মস্পর্শী ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজিক দায়দায়িত্বের জায়গা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিতে পারে। আর এটা পারলেই শুধু বলা যাবে, আমরা আনুষ্ঠানিকতা পালন করছি না। সত্যিই আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাইছি। আমরা চাই নিমতলী ও বেগুনবাড়ির ঘটনায় দোষীদের বিচার হোক দ্রুত বিচার আদালতে। শাস্তি হোক দৃষ্টান্তমূলক। দুর্ঘটনা বলে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তির যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আমরা গড়ে তুলেছি, সেটা একটা মস্ত শৃঙ্খল। তাই এখনই নিতে হবে বিভাগীয় শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা। উঁচু পর্যায়ের, যাঁদের খুঁটির জোর আছে, তাঁদের কারও বরখাস্তের ঘটনা ঘটলে আমরা বুঝব, শোক পালন শুধু আচার-উপাচারে বন্দী থাকছে না।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.