ঢাকায় চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভা কাল-পাহাড়ে আবার অস্থিরতা by হরি কিশোর চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি আবারও অস্থির হয়ে উঠছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জনসংহতি সমিতির বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হবে এ মাসে। অপর দিকে ভূমি কমিশনের একতরফা শুনানি বন্ধের আলটিমেটাম দিয়েছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নামের ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন।


এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে ওঠার মুহূর্তে আঞ্চলিক তিন প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের সংঘাত আদিবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আদিবাসী জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী তিন সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা) ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) একাধিক নেতা-কর্মী সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে বিবদমান পক্ষগুলো একে অন্যকে দোষারোপ করছে।
এ অবস্থায় কাল সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির পঞ্চম বৈঠকের ফলাফলের ওপর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ভর করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন, ভূমি কমিশনের একতরফা শুনানি বাতিল ও বিতর্কিত ধারা সংশোধন নিয়ে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করলেও এসব দাবি সর্বজনীন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি : জনসংহতি সমিতির সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নে সংগঠনটি কয়েকবার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েও ঘোষণা করেনি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর রাঙামাটি সফর ও পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই পিছিয়ে দেওয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে চলতি মাসে।
সূত্র মতে, কাল সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির পঞ্চম বৈঠকে পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নের কর্মসূচিভিত্তিক পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করা না হলে জুন বা জুলাই মাসে মহাসমাবেশ ডেকে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে। এর মধ্যে হরতাল অবরোধসহ অসহযোগ কর্মসূচিও থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সরকারের মনোভাবের ওপর কর্মসূচির মাত্রা নির্ভর করবে বলে তিনি জানান।
ইউপিডিএফ: ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন চেয়ারম্যানের একতরফা শুনানি বাতিল, প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও কমিশন আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। এসব দাবিতে দলের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ভূমি কমিশন চেয়ারম্যানকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ৩০ মের মধ্যে একতরফা শুনানি বাতিল করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পক্ষ থেকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে এ দুটি ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইউপিডিএফের অভিযোগ, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী একতরফাভাবে শুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যার মাধ্যমে তিনি পুনর্বাসিত বাঙালিদের দেওয়া অবৈধ ভূমি বন্দোবস্তকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত: এই দুই দাবি নিয়ে পাহাড়ে যখন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে তখন শুরু হয়েছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত।
এই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পাহাড়িদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের সফলতা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। গত ১২ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের দীঘিনালায় জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা সুপ্রাণো চাকমা, ১৯ মে লক্ষ্মীছড়িতে জনসংহতি সমিতির (সন্তু লারমা) নেতা অনিল চাকমা সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন।
এই দুই ঘটনার পর দুটি মামলা দায়ের করা হয়, যাতে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের একাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।
সর্বশেষ ২০ মে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ১৭তম কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কাপ্তাই ফিরে যাওয়ার সময় রাঙামাটিতে একটি পেট্রলপাম্পে বোমা হামলায় ১৩ জন কর্মী আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাপ্তাইয়ের বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মংসাচিং মারমা (২০) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় ইউপিডিএফ ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নয় নেতার নাম উল্লেখসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.