মন্ত্রীর সফরের সঙ্গে বিদ্যালয় ছুটির সম্পর্কটা কী?-তিনি আসবেন বলে...

তিনি আসবেন বলে ৩২৩টি বিদ্যালয় ছুটি! তিনি আসবেন বলে এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত এক হাজার ৪৬৩ জন শিক্ষককে দূরদূরান্ত থেকে গাঁটের টাকা খরচ করে আসতে হবে। বরগুনার তিনটি উপজেলায় তাই সাজ সাজ রব। কোনো উপজেলার শিক্ষকেরা চাঁদা দিয়ে লঞ্চ ভাড়া করছেন, কোনো উপজেলায় ‘অন্যভাবে’ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


শিক্ষা কর্মকর্তা, সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশ আছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জারি হয়েছে ‘অলিখিত নির্দেশ’। এই দায় যদি মন্ত্রীর না হয়, তাহলে নির্দেশদাতাদের জবাবদিহি করানোর দায় নিশ্চয়ই তাঁর।
প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এলাকার সব প্রাথমিক শিক্ষকের মতবিনিময় কি বাধ্যতামূলক ছিল? নাকি তিনি এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই তাঁর যা জানার এবং যা জানানোর, তা সমাধা করতে পারতেন? আর যদি সব শিক্ষকের সঙ্গে মতবিনিময়েরই দরকার হয়, তাহলে স্কুল ছুটির পরও তো তা করা যায়। এতে একটি মূল্যবান শিক্ষা দিবসের অপচয় হতো না। মন্ত্রী তো আগে থেকেই এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে পারতেন। সমাজে এ ধরনের তুঘলকি ঠাঁটবাটের যথেষ্ট সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি বিষয়টি আমলে নিলেন না?
বঙ্গদেশ থেকে রাজতন্ত্র কয়েক শতক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। তা হলেও নেতা-নেত্রীদের মধ্যে রাজতান্ত্রিক চালচলন এখনো স্বমহিমায় বহাল। এই ‘নব্য রাজাদের’ কখনো মন্ত্রী, কখনো সাংসদ, কখনো বা দলীয় নেতার বেশে দেখা যায়। এঁদের কখনো সোনার ধানের শিষ, আবার কখনো সোনার মুকুট, সোনার নৌকা কিংবা সোনার লাঙল উপহার পেতেও দেখা যায়। তাঁরা যে এলাকায় যান, প্রায়ই সে এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মায় সরকারি দপ্তর ফাঁকা করে সবাইকে তাঁদের সংবর্ধনায় হাজিরা দিতে হয়। আবার তিনি না চাইলে তাঁর জন্য নির্মিত অজস্র তোরণ এবং বাহারি সংবর্ধনা নিমেষেই বাতিল হয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয়, তোষামোদের তুঘলকি কর্মকাণ্ড নেতা-মন্ত্রীদের প্রশ্রয়েই চলে, আবার রাজনৈতিক শুভবোধ জাগ্রত হলে তা উবেও যায়।
এমন তুঘলকি ডাঁট আর যেন দেখতে না হয়।

No comments

Powered by Blogger.