মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিশেষ উদ্যোগ দরকার-চাল ডাল তেলের দাম

বাজারে চাল, ডাল, তেল ও চিনির দাম বাড়তির দিকে। গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের চালের দাম মণপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। এটা বড় উদ্বেগের বিষয়। কারণ, দেশের খেটে খাওয়া মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। আর গরিবের প্রোটিন (আমিষ) হলো ডাল।


ভোজ্যতেল ও চিনি খাদ্যতালিকার শীর্ষে থাকে। এসব পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ দরকার। মনে রাখতে হবে, ব্যবসায়ীদের ওপর বলপ্রয়োগে দাম কমানো যাবে না, অর্থনৈতিক উপায়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে।
এর একটি হলো চালের ওপর চাপ কমাতে গম আমদানি করা। ইতিমধ্যে সরকার ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কম। আর দেশে যেহেতু গমের উৎপাদন বেশি নয়, তাই আমদানি করলে সমস্যা হবে না। বরং সরকার কাজের বিনিময়ে খাদ্য, ভিজিডি, ভিজিএফ প্রভৃতি কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করতে পারবে। সরকারের গুদামে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলে তার শুভ প্রভাব পড়বে বাজারে।
আরেকটি উপায় হলো, আমন মৌসুমে ভালো ফলনের বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া। বন্যার পানিতেও বাড়ে এ রকম স্বর্ণা সাব-২ ও বিআর-১১ সাব-১। এই দুটি উচ্চফলনশীল ধানের ব্যাপক প্রসারের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি গুদাম নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে গুদামে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। দরকার অন্তত ২০-২৫ লাখ চাল ধারণের সক্ষমতা অর্জন। নির্মাণাধীন গুদামগুলোর কাজ অবিলম্বে শেষ করা হলে অতিরিক্ত তিন লাখ মেট্রিক টন চাল রাখার ব্যবস্থা হবে। এদিকে জোর দেওয়া হোক। আমনের ভালো ফলনের বাস্তব সম্ভাবনা সৃষ্টি ও গুদামে চাল রাখার সক্ষমতা বাড়াতে পারলে আড়তদারেরা চাল ধরে রাখার চেষ্টা করবেন না। এতে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।
আমাদের চাহিদার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ডাল আমদানি করতে হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ডালের দাম বাড়লে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ে। তাই দেশে ডালের উৎপাদন বাড়ানোর সক্রিয় উদ্যোগ দরকার। উত্তরাঞ্চলে পানি কম, সেখানে ডাল চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। বাজেটে এ রকম কোনো উদ্যোগ দেখা গেল না। ডাল চাষে বিশেষ বরাদ্দ দিলে সুফল পাওয়া যাবে।
পাশাপাশি খাদ্য পরিবহন যথাসম্ভব নির্ঝঞ্ঝাট করতে না পারলে বাজার-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে। এক ট্রাক চাল উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী মহল, পরিবহনমালিক বা শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু নেতা-কর্মী এবং এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। খাদ্য পরিবহনে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। এভাবে বাজারশক্তির স্বাধীন ভূমিকা পালনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে মূল্য স্থিতিশীল রাখা সহজ হবে।
অন্তত চাল, ডাল, তেলের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এটা সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.