মন্ত্রীরা জনস্বার্থের বিপক্ষে দাঁড়ালে কীভাবে হবে?-বিআরটিসিকে কোণঠাসা করা

বেসরকারি বাসমালিকেরা পরিবহন খাতে কার্যত একচেটিয়া ব্যবসা করছেন। এখন তা আরও জোরেশোরে প্রতিষ্ঠা করতে চান। আর তাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বাসগুলো কোনোভাবেই রাস্তায় চলতে দিতে চান না। প্রথম আলোর এক সংবাদেই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।


বেসরকারি বাসমালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্যে বিআরটিসি বাসের যাত্রী পরিবহন এখন নামমাত্র। সেটাও যেন গুটিয়ে নেওয়া হয়, সেই পাঁয়তারাই চলছে জোরেশোরে। আর এ পাঁয়তারায় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের যে মদদ রয়েছে, তা প্রকাশ পেয়েছে আবারও। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাসমালিক-শ্রমিকেরা যে ধর্মঘট ডেকেছিলেন, দুই মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে বিআরটিসির স্বার্থ। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বস্তুত ২০০৪ সালে তৎকালীন জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে বেসরকারি বাসমালিক-শ্রমিকদের এক চুক্তির দোহাই দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিআরটিসির বাসসেবা তুলে নেওয়া শুরু হয়। অবশ্য তার কয়েক বছর আগে থেকেই ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের জিম্মি করে ও ভাঙচুর চালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করার অপচেষ্টা চলে আসছে। অথচ ১৯৬১ সালের যে অধ্যাদেশবলে বিআরটিসি চালু করা হয়েছে, তাতে রাষ্ট্রীয় পরিবহন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআরটিসির বাস দেশের যেকোনো স্থানে চলাচলের অধিকার রাখে। আইন-অধ্যাদেশের তোয়াক্কা না করে জোট সরকারের মন্ত্রী একটি অবৈধ চুক্তি করেছিলেন। প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী বেসরকারি বাসমালিকদের পক্ষ নিয়ে বিআরটিসির চলাচল রুদ্ধ করে দিচ্ছেন। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ নিয়ে একাধিকবার খবর বেরিয়েছে। অথচ বর্তমান সরকারের সময় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিআরটিসিকে পুনর্গঠন করা ও যাত্রী পরিবহনে বাসসেবা বাড়ানোর জোর সুপারিশ করেছে।
সরকারি দলিল অনুসারে, বিআরটিসির বাসসেবা চালু করা হয়েছিল ‘দেশে স্বল্পমূল্যে দ্রুত, দক্ষ, আরামপ্রদ, আধুনিক ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা’র লক্ষ্য নিয়ে। আশির দশকে গণপরিবহনে বিআরটিসির বাসসেবা ছিল জনগণের এক কাঙ্ক্ষিত পাওয়া। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি বাসের যত প্রসার ঘটেছে, তত বেড়েছে এসব বাসমালিকদের দৌরাত্ম্য আর সংকুচিত করা হয়েছে বিআরটিসি। বোঝাই যায়, বেসরকারি বাসমালিকেরা সুস্থ প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নন। আর তাঁদের রয়েছে রাজনৈতিক মদদ। ফলে গণপরিবহনের মতো অতি প্রয়োজনীয় বিষয়টি হয়ে পড়েছে বিশৃঙ্খল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
আজ চাইলেই বেসরকারি বাসমালিকেরা ধর্মঘট ডেকে সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে ফেলতে পারেন। অচলাবস্থা তৈরি করতে পারেন। এভাবে মুক্তবাজারের নামে গণপরিবহনকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। মানুষকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে সরকারকেই। বিআরটিসির বাসকে চলতে দিতে হবে প্রয়োজনীয় সংখ্যায়। জনস্বার্থের বিপক্ষে দু-একজন মন্ত্রীর অবস্থানে গোটা জাতিকে কেন খেসারত দিতে হবে? জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.