জনজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকুক-বিএনপির হরতাল

প্রায় সাড়ে তিন বছর হরতালমুক্ত থাকার পর বাংলাদেশ আজ আবার হরতালের মুখোমুখি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এক মাসেরও বেশি সময় আগে এই হরতাল ঘোষণা করেছে বস্তুত কোনো জোরালো যুক্তি ছাড়াই। এই হরতাল থেকে বিএনপির কী রাজনৈতিক অর্জন সম্ভব, তা আমাদের বোধগম্য নয়।


‘সরকারের ব্যর্থতা ও কুশাসনের’ প্রতিবাদ জানানোর প্রয়োজনীয়তা যদি দলটির নেতৃত্ব বোধ করে থাকেন, তাহলে সেটা করার অনেক গঠনমূলক পথ খোলা ছিল এবং এখনো আছে। হরতালের মতো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কর্মসূচি তাঁরা না নিলেও পারতেন।
গত মাসে বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় দলীয় সমাবেশে ২৭ জুন হরতালের ডাক দেওয়ার পর সাধারণভাবে জনগণ হরতালের বিরুদ্ধে তাঁদের মত প্রকাশ করেছেন, সংবাদমাধ্যমে সেসব মতামতের ব্যাপক প্রতিফলন ঘটেছে। হরতাল প্রত্যাহারের জন্য বিরোধী দলকে আহ্বান জানানো হয়েছে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু বিএনপি কারও আহ্বানে সাড়া না দিয়ে হরতাল পালনের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে। বরং দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘শান্তিপূর্ণ হরতালে বাধা দিলে ও উসকানি সৃষ্টি করা হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
বিএনপি, সরকার ও সরকারি দলের উদ্দেশে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার: জনজীবনের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। মানুষের চলাফেরায় ও জীবিকার কাজে বাধা সৃষ্টি করা চলবে না। হরতাল আহ্বান করার রাজনৈতিক অধিকার অবশ্যই যেকোনো দলের আছে। কিন্তু সেটা আহ্বানের মধ্যেই সীমিত থাকতে হবে। ‘হরতাল সফল করা’র নামে মানুষের চলাফেরায় বাধাদান, তথাকথিত পিকেটিংয়ের নামে ভাঙচুর ইত্যাদির মাধ্যমে জনজীবনে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করার অধিকার কারোরই নেই। শান্তিপূর্ণ হরতাল তখনই সম্ভব যখন জনগণের উদ্দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়ে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার ওপর নির্ভর করা হয়। কিন্তু তা না করে নানাভাবে জনজীবনে বাধা সৃষ্টি করা, শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় বলে হরতাল শান্তিপূর্ণ হতে পারে না। হরতাল এমনই এক ভীতিকর শব্দে পরিণত হয়েছে, যার সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ’ শব্দটি আর মোটেও ব্যবহার করা যায় না।
রাজনৈতিক দলগুলোর সংবিধানপ্রদত্ত অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই আমরা দাবি করছি, আজ বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংযমের সঙ্গে হরতাল পালন করবেন: তাঁদের আহ্বানে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া কতটা আসে সেটাই দেখবেন, মিছিল-পিকেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে হস্তক্ষেপ ঘটাবেন না। তাহলে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো কারণ ঘটবে না, জনগণের স্বাধীন ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন আইনের মধ্যে থাকে, বাড়াবাড়ি না করে। এতে জবরদস্তির শিকার হয় জনসাধারণও, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই, জনজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক।

No comments

Powered by Blogger.