আদালত প্রাঙ্গণে নারী নির্যাতন-পুলিশ কি সংযত হবে না?

পুলিশ কি হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে? গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকায় একের পর এক ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা থেকে এমন ধারণা করা হলে তাকে অমূলক বলা যাবে না। ২৬ মে প্রথম আলোর তিনজন আলোকচিত্র সাংবাদিক পুলিশের হাতে নির্যাতিত হন আগারগাঁওয়ে।


তাদের অপরাধ ছিল_ ছাত্রীদের একটি মিছিলের ছবি তোলার জন্য ঘটনাস্থলে হাজির হওয়া। হাইকোর্ট ২৯ মে এ ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে ৫ জুন আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দায়ী পুলিশ সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে_ এ নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। সর্বোচ্চ আদালত যেদিন এ নির্দেশ প্রদান করেন, ঠিক সেদিনেই ঢাকার নিম্ন আদালত চত্বরের পাশে দুপুরবেলা একটি ক্লাবের ভেতরে পুলিশের একাধিক সদস্য এক তরুণীর শ্লীলতাহানি করেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ওই তরুণী বাবা-মায়ের সঙ্গে আদালতে এসেছিলেন নারী নির্যাতনের একটি অভিযোগের প্রতিকারের আশায়। দুর্ভাগ্য যে, বিচার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তিনি পেলেন না। তার আগেই পুলিশের হাতে চরমভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হলেন। তার বাবাকেও পুলিশ হেনস্তা-হয়রানি করে। এ ঘটনা সাংবাদিক ও আইনজীবীদের কাছে তুলে ধরার সময় পুলিশ ফের মারমুখী হয়ে ওঠে এবং কয়েকজনকে মারধর করে। এ ঘটনায় দুই পুলিশকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। ঘটনা অবগত হয়ে ৩০ মে বুধবার হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের ছয় কর্মকর্তাকে ৬ জুন আদালতে হাজির হয়ে তাদের ভূমিকার ব্যাখ্যা জানাতে বলেছেন। ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা ও সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না_ তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এ পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু তাতেও কি পুলিশের আচরণ বদলাবে? এমন সংশয় বোধ করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও পোষণ করেন। 'পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংবাদ ও ছবি সংগ্রহের জন্য' সাংবাদিকদের প্রতি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শ কিন্তু এমনই একটি বার্তা দেয়। প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক_ যে কোনো গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে থেকেই সংবাদ সংগ্রহের চেষ্টা করেন এবং এ জন্য যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন। এ কাজ থেকে তাদের বিরত থাকার পরামর্শ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং ঝুঁকির মাত্রা যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে এবং সেটা প্রদান করাই তাদের দায়িত্ব। আমরা আশা করব, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পুলিশকে বেপরোয়া না হতে পরামর্শ দেবে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিরোধীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছে এবং জনগণও দেখছে কোথায় কী ঘটছে। অনেক গুরুতর অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ-র‌্যাব-সিআইডি চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা আশা করব, এ ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার প্রতি তারা মনোযোগী হবে এবং একই সঙ্গে সাংবাদিক-আইনজীবীসহ সমাজের সবার সঙ্গে সদাচরণ করবে।
 

No comments

Powered by Blogger.