পুলিশের নিষ্ঠুরতা-এ আচরণ কাম্য নয়

সাংবাদিক নির্যাতনের এক দিন পরই নিষ্ঠুরতার নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করল পুলিশ। রাজধানী ঢাকাসহ বরিশাল ও পাবনায় পুলিশের আচরণ দেশের মানুষকে বিস্মিত করেছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পুলিশ হঠাৎ এমন আচরণ করছে কেন? পুলিশের কাছ থেকে কি এ আচরণই কাম্য?


পুলিশের আচরণ সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে বাহিনীর হাতে, তারা নিজেরা কতটুকু সে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন- সে প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা খুব ভালো- এমন কথা বলা যাবে না। সেই পুলিশের আচরণ যদি জনমনে ভীতির সঞ্চার করে, তাহলে পুলিশকে দিয়ে পুলিশের কাজ হবে না। একসময় রাস্তায় বড় বড় হোর্ডিংয়ে লেখা থাকত, 'পুলিশ জনগণের বন্ধু'। জনগণও পুলিশকে বন্ধু হিসেবে পেতে চায়। কিন্তু পুলিশ যখন শত্রুর মতো আচরণ করে তখন পুলিশকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। পুলিশের দায়িত্ব নিরাপত্তা বিধান করা। এই পুলিশই যদি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে মানুষ অসহায় বোধ করে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনে একধরনের ভীতির সঞ্চার করেছে। ঢাকা, বরিশাল ও পাবনায় এসব ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী এক নারী ও তাঁর মা-বাবাকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। পুলিশি নিষ্ঠুরতার শিকার ওই নারী জানিয়েছেন, লোকজনের সামনে থেকে তাঁকে জোর করে আদালত ভবনসংলগ্ন পুলিশ ক্লাবের ক্যান্টিনে নিয়ে শ্লীলতাহানি করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ তাঁকে ও তাঁর মা-বাবাকে মারধর করে এবং ধরে নিয়ে যায় বলে ওই নারী অভিযোগ করেছেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দিনভর হেনস্তা শেষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের হস্তক্ষেপে রাত পৌনে ১০টায় তিনজনকেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। বরিশালের হিজলা উপজেলায় গতকাল পুলিশের এক কর্মকর্তা এক গৃহবধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহজালালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে পাবনা জজ আদালতের হাজতখানায় মঙ্গলবার সকালে পুলিশ এক আসামিকে পিটিয়ে জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনজীবীদের পিটিয়ে জখম করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
সাংবাদিক নির্যাতনসহ আদালত এলাকায় নারীর শ্লীলতাহানি এবং সাংবাদিক ও আইনজীবী নির্যাতনের ঘটনায় আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিন আলোকচিত্র সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে উপসচিব পদমর্যাদার নিচে নন, এমন ব্যক্তিকে প্রধান করে কমিটি গঠন করতে আইনসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিকে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওই নির্যাতনের ঘটনায় নিজেদের ভূমিকার ব্যাখ্যা জানাতে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। ঢাকা জজ আদালত এলাকায় এক নারীর শ্লীলতাহানি, সাংবাদিক ও আইনজীবী নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের ছয় কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তাঁদের আগামী ৬ জুন আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের ভূমিকার ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়েছে।
কিন্তু এখানেই সব থেমে থাকবে না। পুলিশের কিছু সদস্যের মনে এই রিরংসা প্রবৃত্তি কেমন করে ঢুকল, কে বা কারা তাদের এই পথে ঠেলে দিল- সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। দেশের মানুষ পুলিশকে 'জনগণের বন্ধু' হিসেবেই দেখতে চায়। পুলিশের কাছ থেকে পুলিশসুলভ আচরণ কামনা করে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে পুলিশের ভূমিকা আস্থার সংকট বাড়বে। এই সংকট সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করবে। সেক্ষেত্রে পুলিশকে প্রকৃত অর্থেই 'জনগণের বন্ধু' হয়ে উঠতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.