শিক্ষক ফরিদ হত্যা-আসামির জবানবন্দি নিয়ে রহস্য আছে : পুলিশ

শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে রাজমিস্ত্রি আবুল কালাম ওরফে কালু সরদারের দেওয়া জবাববন্দি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও ওই স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সহসভাপতিকে পুলিশ এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। এ ব্যাপারে পুলিশ বলেছে, কালুর দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে রহস্য রয়েছে।পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে কালু এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে_এমনটি কালু পুলিশ প্রশাসনকে নিশ্চিত করে।


কিন্তু আদালতে গিয়ে কালু পরকীয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেছে, পিঙ্গলাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য তাকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, পিঙ্গলাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্য কাজী ছালাম খুনের পরিকল্পনা করেছিল। অভিযুক্তদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, আসামির জবানবন্দি নিয়ে সন্দেহ আছে। তাকে আবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
কালুর জবানবন্দি : গত বুধবার রাতে কালু সরদারকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানার গোদা বাজার এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তসলিম আরিফের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। কালু জবানবন্দিতে বলেছে, খুনের দুই দিন আগে অভিযুক্ত দুজন তাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে যান। তাঁরা বলেন, 'শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে মারধর করবি যেন ও (ফরিদ) স্কুলে না আসে।' প্রধান শিক্ষক তাকে ৫০০ টাকা ও একটি ছুরি দিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য পরামর্শ দেন। 'সে অনুযায়ী ২২ সেপ্টেম্বর সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে ফরিদকে স্কুলের চাকরি না করার জন্য বলি। একপর্যায়ে চাকু দিয়ে ভয়ভীতি দেখাই। ওই সময় ফরিদ চিৎকার করলে ধারালো ছুরি দিয়ে শিক্ষক ফরিদকে উপর্যুপরি কুপিয়ে পাশের বাগানে গিয়ে আত্মগোপন করি।'
কালু বলেছে, 'মোস্তফা মৃধার বাগানে সন্ধ্যা পর্যন্ত লুকিয়ে ছিলাম। পরে পিঙ্গলাকাঠি গ্রামের নিজ বাড়িতে চলে আসি। হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর আমিরুলের সঙ্গে আমার দেখা হলে সে আরো ৫০০ টাকা দিয়ে আমাকে এলাকা ছাড়তে বলে। এ ঘটনার পর এলাকার মধ্যে পাঁচ দিন আত্মগোপনে থাকার পর এলাকা ত্যাগ করেছি।'
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য : পরিচালনা পরিষদের সদস্য কাজী ছালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর প্রতিবেশী কালু সরদারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তখন প্রশ্ন করেছিলাম, তুমি ঘটনার সময় কোথায় ছিলে? সবাই লাশ দেখতে এসেছে, তুমি কেন আসনি?' ছালাম বলেন, 'ওই সব ঘটনায় কালু ধারণা করছে তার গ্রেপ্তারের পেছনে আমার হাত রয়েছে। তাই আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা জবাববন্দি দিয়েছে।' প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ পিঙ্গলাকাঠি গ্রামে ফরিদ জমাদ্দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.