প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না ইইউ

উরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। গতকাল রবিবার ঢাকার একটি হোটেলে 'বাংলাদেশে বার্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচি' শীর্ষক আলোচনায় ইইউয়ের রাষ্ট্রদূতরা এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে একজন সাংবাদিক কথিত অনিয়মের অভিযোগে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত হওয়ার পর বাংলাদেশের দুর্নীতি বিষয়ে ইইউয়ের মূল্যায়ন জানতে চান। এর জবাবে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত সেন্ড অলিং বলেন, 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। এটি অর্থনৈতিক অগ্রগতির নিয়ামক।'


সেন্ড অলিংয়ের সুর ধরে বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম আনা বলেন, 'আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিই না; যদিও পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে ইইউ সম্পৃক্ত নয়, এর পরও যদি দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তাহলে বলব, তদন্ত হওয়া উচিত।' তিনি আরো বলেন, 'অবকাঠামো উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নেওয়া এবং সমাধান হওয়া উচিত।' অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে উইলিয়াম আনা বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের ক্ষমতা দিয়ে শক্তিশালী করা উচিত এবং ওই কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত।' তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র উন্নয়নসহ স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ইইউ সহায়তা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে পয়োনিষ্কাশন, শিক্ষা খাতে উন্নয়ন, স্থানীয় সরকারকে কার্যকর করা, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও রোহিঙ্গা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। চলতি ২০১১ সালে এসব প্রকল্পে ১৪৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরো সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উইলিয়াম আনা বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নে যাতে দুর্নীতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো প্রকল্পে দুর্নীতি হলে তা সহ্য করা হবে না। কারণ ইউনিয়ন যেসব সহযোগিতা দেয়, তা সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জনগণের করের টাকা। এ অর্থ সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে প্রতিটি দেশের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার অধীনে হবে, এ নিয়ে চলমান রাজনৈতিক বিতর্কের ব্যাপারে ইইউয়ের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে উইলিয়াম আনা ২০০৮ সালের নির্বাচনকে 'মডেল' হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ২০১৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হিসেবে দেখতে চায় ইইউ। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি জানান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধ সরকার উপেক্ষা করেছে বলে অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা ইইউয়ের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে উইলিয়াম আনা বলেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে ইইউ চায় বাংলাদেশের সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র উন্নয়নে ইইউ কাজ করে এবং জনগণের মতামত যাতে প্রতিফলিত হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখে। নাসিক নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষণ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কজন প্রতিনিধি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং পুরো নির্বাচন ইইউ পর্যবেক্ষণ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্বত্যবাসীর পয়োনিষ্কাশন ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইইউ সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এতে কোনো বৈষম্য করা হয় না। উল্লেখ্য, ইইউ ২০১১ সালে বাংলাদেশকে কী পরিমাণ অনুদান দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে অনুদান কেমন হবে_এ ধারণা দিতে গতকাল ওই আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে ঢাকায় ইইউয়ের সদস্য দেশগুলোর মিশনপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.