বাবার ইতিহাস ফিরিয়ে আনলেন আইভী

৯৭৪ সালের ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি হলো প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জে। ৩৭ বছর আগের সেই দিনও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে নিজ দল আওয়ামী লীগের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বাবা আলী আহমেদ চুনকা। তখন তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁকে বাদ দিয়ে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা খোকা মহিউদ্দিনকে। নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন আলী আহমেদ চুনকা। বিজয়ী হয়েই ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে।


চুনকা বলেছিলেন, 'লিডার, আমি তো নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে
বিজয়ী করেছে।' বঙ্গবন্ধু তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, 'জানতাম তুইই জিতবি।'
১৯৭৪ সালের সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল
নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে। এবার কেন্দ্রীয় চরিত্রে আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। ব্যাপক জনসমর্থন পেয়ে বিজয়ী হলেন মেয়র পদে। তিনিও দলীয় সমর্থন পাননি। জনতার ভালোবাসা নিয়েই লড়েছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৪ সালে আলী আহমেদ চুনকার মৃত্যুর পর এই পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। বড় মেয়ে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী নিউজিল্যান্ডের পারিবারিক জীবন ছেড়ে ২০০৩ সালে চলে আসেন তাঁর প্রিয় জন্মভূমি নারায়ণগঞ্জে। সক্রিয় হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ওই সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী করা হয়। বাবার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা আর নিজের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে হয়ে যান পৌর চেয়ারম্যান। দীর্ঘ আট বছর দায়িত্ব পালনকালে সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন। সুখে-দুঃখে ছুটে গেছেন তাদের কাছে। পেয়েছেন তাদের ভালোবাসা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এবার তাঁকে দল সমর্থন দেয়নি। দল থেকে সমর্থন দেওয়া হয় এ কে এম শামীম ওসমানকে। কিন্তু আইভী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লড়ে যান। শেষ পর্যন্ত জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে দেখিয়ে দিলেন, জনগণ সঙ্গে থাকলে দলীয় সমর্থনও গৌণ হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জবাসীর কারো কারো প্রশ্ন, আইভীও কি তাঁর বাবার মতো ছুটে যাবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে?
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় একেকটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আইভীর বাড়িতে জড়ো হওয়া সমর্থকরা আনন্দ-উল্লাস শুরু করেন। এর আগেই নিজ বাড়িতে স্থাপিত মিডিয়া সেন্টারে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটগণনার ফল প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। ভোটের প্রাথমিক ফল জানতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসানো হয় বড় পর্দা। প্রজেক্টরের মাধ্যমে কর্মীরা ফল প্রদর্শন করেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকেই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন আইভী। প্রজেক্টরের পাশাপাশি আইভীর ফেসবুক ফ্যানপেজেও ভোটগণনার প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হয়। ওই সময় আইভীর বাড়িতে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। লাউড স্পিকারে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে আইভী বলেন, 'আপনারা জিয়া হলের গেটে উপস্থিত থাকুন। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হবে।'

No comments

Powered by Blogger.