ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা দেওয়ার অনুরোধ বিজিএমইএর-ঢাকার ৯টি অঞ্চলে বিজিএমইএর ক্রাইসিস কন্ট্রোল রুম

দের আগে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন কারখানায় বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের বোনাসসহ পূর্ণ মাসের বেতন দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান বিজিএমইএর নেতারা। একই সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষ এড়ানোর জন্য প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে ক্রাইসিস কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের সুবিধার্থে ৪ ও ৫ নভেম্বর গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলসংলগ্ন ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত (এডি) শাখা খোলা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।


গতকাল রবিবার রাজধানীর পান্থপথে নিজস্ব ভবনের সম্মেলনকক্ষে 'রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রম পরিস্থিতি' বিষয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. ইসরাফিল আলম এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সফিক আলম মেহেদী।
সভায় আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাসসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য গার্মেন্টস মালিকদের অনুরোধ জানান। শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'যেকোনো বিষয়ে অসন্তোষ তৈরি হলেই মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করুন। শ্রম অধিদপ্তরকে ও বিজিএমইএর নেতাদের জানান। তাঁরা এর সমাধান করবেন।'
শ্রমিকদের আইনগত অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'শ্রমিকের স্বার্থ আদায়ের জন্য আন্দোলন করুন; কিন্তু এ শিল্প ধ্বংস হয়_এমন কিছু করবেন না।' শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের সুবিধার্থে ঈদের আগে বন্ধের মধ্যে ৪ ও ৫ নভেম্বর গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলসংলগ্ন ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত (এডি) শাখা খোলা রাখার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহের জন্য ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষকে কাস্টমস হাউস খোলা রাখার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইর সভাপতি সফিউল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে শ্রমিকরা যাতে সুষ্ঠুভাবে বেতন-ভাতা পান, সে লক্ষ্যে সরকার এবং বিজিএমইএ মিলে অগ্রিম প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ঢাকা ও এর আশপাশের প্রায় তিন হাজার পোশাক কারখানার জন্য ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জকে মোট ৯টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বিজিএমইএ কার্যালয়ে ক্রাইসিস কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বিজিএমইএ অফিসে সমন্বয় সেল খোলা হয়েছে এবং এতে পুলিশের দুজন সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থার একজন প্রতিনিধি সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে তিনি আশঙ্কা করেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য নয়_এমন কারখানাগুলোয় বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর বিশেষ নজরদারির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি। সভায় বিজিএমইএ ও শ্রমিক নেতারা ঈদের আগে শ্রমিকদের বোনাসসহ পূর্ণ মাসের বেতন দেওয়ার জন্য কারখানা মালিকদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য দেন।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষে সম্মিলিত গ্রার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আকতার বলেন, 'ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন গার্মেন্টেসে নানা ধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কোনো কোনো গার্মেন্টস শ্রমিকদের কেবল বোনাস দেবে এবং কোনো কোনো গার্মেন্টস দেবে কেবল বেতন। আবার কোনো কোনো গার্মেন্টস বেতন-বোনাস উভয়ই দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন গার্মেন্টেসে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।'
সভায় জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, প্রতি ঈদে বিভিন্ন গার্মেন্টেসে বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে এমন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এ ধরনের পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতি ঈদে সব গার্মেন্টেস একসঙ্গে বেতন-বোনাস দেওয়ার বিষয়ে একটি অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করা ব্যাপারে পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএর সভাপতি সফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)। সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ ও শিল্প পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও গ্রার্মেন্টস শিল্পের বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.