চাঁদাবাজ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে এ জয় :আইভী by সাবি্বর নেওয়াজ ও সাহাদাত হোসেন পরশ

নির্বাচনী ফল ঘোষণার আগেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, তার এ জয় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার রাত ৮টায় শহরের দেওভোগ এলাকায় নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি 'ভি' চিহ্ন তুলে ধরে বলেন, আমার কাছে খবর এসেছে, আমি জিতে গেছি। আইভী আরও বলেন, '৫২, ৬৯, ৭০, ৭১ এবং ৯০-এ জনতার জয় হয়েছে। জনতার জয় হবেই হবে। কারণ জনতা কখনও ভুল সিদ্ধান্ত নেয়না। নারায়ণগঞ্জ ও সারাদেশে জনগণ আজ প্রমাণ করল, জনতা যা বলে, তা-ই রাখে। এটা জনতার বিজয় আর জনগণের বিজয় নিশ্চিত।


নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না হওয়া প্রসঙ্গে আইভী বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক, খুবই ভালো একটা দিক। সেনা মোতায়েন ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যে সম্ভব এটাই আজ প্রমাণ হলো। আর এটা কিন্তু বাংলাদেশ সরকারই প্রমাণ করল; কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসী বিভিন্ন কারণে ভীত ও শঙ্কিত থাকায় সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিল। আজ নারায়ণগঞ্জবাসীও আমাদের পক্ষে গিয়েছে। আমি তো বলেছিলাম, আমার সেনাবাহিনীর দরকার নেই। লাখো জনতাই আমার সেনাবাহিনী। এ নারায়ণগঞ্জের লাখো জনতা শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই ভূমিকাই পালন করেছে। শান্তিকামী জনতা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রায় দিয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, রায় দিয়েছে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে। জয় হোক জনতার, বিজয় হোক গণমানুষের।
সারাদিন আইভী : সকাল ৬টা। ভোরের আলো ভালোভাবে ফোটার আগেই দেওভোগের ১৭৯/২ বাড়িটি ঘিরে বাড়তে থাকে জনসমাগম। সকাল সাড়ে ৮টায় পেস্ট কালারের শাড়ি ও মুখে চিরচেনা একগুচ্ছ হাসি নিয়ে বের হন আইভী। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি ফিতা কেটে বাসা থেকে গাড়িবহর নিয়ে রওনা হন। প্রথমে তার গাড়িবহর ছুটে চলে
নগরীর মাজদাইর কবরস্থানে। সেখানেই শায়িত আছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা। বাবার কবর জিয়ারত শেষে আইভী যান দেওভোগ শিশুবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই কেন্দ্রে তিনি নিজের ভোট দেন।
সকাল ৯টার দিকে নগরীর তোলারাম কলেজের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় আইভী সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে সময় পার হওয়ার পর বলা যাবে ভোটগ্রহণ নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি-না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কয়েকজন এজেন্টকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে তোলারাম কলেজ, আদর্শ স্কুল ও এবিসি স্কুলে এজেন্ট উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি বলেন, আইভী মৃত্যুর পরোয়া করে না। তবে এজেন্টদের তো প্রাণের মায়া আছে।
দুপুরে নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার ফুলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করার সময় শত শত সমর্থক তাকে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ভোটগ্রহণের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যেন কমতে থাকে। অনেক কেন্দ্রে দোয়াত-কলমের এজেন্ট (আইভীর মার্কা) না থাকার বিষয়ে দুপুরে আইভী সাংবাদিকদের বলেন, অনেক কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চলছে। ইভিএমে এজেন্টের প্রয়োজনীয়তা কম। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে যেসব সরকারি কর্মকর্তা থাকেন, তাদের ওপর এখনও আস্থা রয়েছে। মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। দোয়াত-কলমের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে এটা প্রতিহত করার কোনো শক্তি নেই।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় আইভী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে নেপথ্যে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। ওই দুই কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় আইভী সমর্থকরা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় অনেকে 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে উল্লাস করেন। আইভী সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, বিকেল ৫টায় 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে বিজয় উদযাপন করা হবে। এখন তোমরা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবে। ভোটের ফল না নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরে যাবে না। ওই দুই কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইভী বলেন, একটু পরই 'লাঞ্চ আওয়ার'। এ সময় আপনারা সতর্ক থাকবেন। 'লাঞ্চ আওয়ার'কে টার্গেট করে কেউ ভোট চুরি করার চেষ্টা করতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ মূল শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকা ঘুরে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বিকেল ৩টায় দেওভোগের বাসায় ফেরেন আইভী। বাসায় ঢোকার সময় সেখানে অপেক্ষমাণ কয়েকশ' সমর্থক স্লোগান দিতে শুরু করেন।

No comments

Powered by Blogger.