আইভীর বিশাল জয় by নিয়াজ মোর্শেদ,রাশেদ মেহেদী ও এমএ খান মিঠু

বিস্মরণীয় জয় পেয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়রের আসন অলঙ্কৃত করতে যাচ্ছেন তিনি। দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে সিটি করপোরেশনের ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোটারের সমর্থন পান তিনি। রাত পৌনে ১টায় তাকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। আইভীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান পান ৭৮ হাজার ৭০৬ ভোট। ১ লাখ ১ হাজার ৩৪২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আইভী।


ফল ঘোষণার শুরু থেকেই আইভী বড় ব্যবধানে এগিয়ে যেতে থাকেন। প্রথম কেন্দ্রটি থেকে শুরু করে একবারের জন্যও শামীম ওসমান আইভীকে টপকে যেতে পারেননি। ভোটের এ ফলকে আইভীর সমর্থকরা নিঃশব্দ জনঅভ্যুত্থান বলে আখ্যায়িত করেন। ফল ঘোষণার অল্প সময়ের মধ্যেই বিজয় উদযাপন করতে শুরু করেন বিজয়ী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। ভোটগ্রহণ শেষে শহীদ জিয়া হলে গণনা শুরু হলে ভোট পাহারা দিতে গিয়েই আইভীর কর্মীরা উৎসবের আয়োজন শুরু করেন। সময় যত গড়াতে থাকে প্রাপ্ত ভোটে আইভীর পাল্লাও ততো ভারী হতে থাকে। একই সঙ্গে কর্মী
সমর্থকদের ড্রামস এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র আনন্দ আয়োজনে বাড়তি গতি আনে।
অন্যদিকে বিজয় সুনিশ্চিত বুঝতে পেরে সন্ধ্যার পরপরই সংবাদ সম্মেলন করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান আইভী। সন্ধ্যায়ই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জনতা সত্য ও সুন্দরের পক্ষে রায় দিয়েছে। শত চেষ্টা এবং ষড়যন্ত্র করেও তার প্রাপ্য বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তার জয় চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে। এ সময় তিনি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগে ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
পরে এ বিজয়কে নারায়ণগঞ্জের জনগণের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, সরকার চাইলে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে এটিই তার প্রমাণ। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মী এবং গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সামনের দিনে শান্তির পক্ষে কাজ করতে শামীম ওসমানের প্রতিও আহ্বান জানান আইভী।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান ফল ঘোষণার পর কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানাবেন তিনি। তবে গতকাল ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আধঘণ্টা আগে শামীম সাংবাদিকদের বলেন, কারচুপি করে তাকে হারানো হচ্ছে। আর তাতে তার দলেরই কোনো একটি অংশের সমর্থন রয়েছে। সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী হওয়ার সমস্যা তুলে ধরে শামীম বলেন, তাকে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি না পারছেন বলতে, না পারছেন সইতে। ভোটের সময় পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠিও দেন শামীম। একই সঙ্গে ইভিএম প্রযুক্তির ভোটের ক্ষেত্রে কিছু কারচুপির অভিযোগও করেন তিনি।
তবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কারচুপির অভিযোগ উড়িয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় স্থানীয় জনগণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রমাণ করেছে জনগণ চাইলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা সম্ভব।
তবে সকালের দিকে শহরের বেশ কিছু কেন্দ্রে এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ছিল। সেনাবাহিনী মাঠে না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে। নির্বাচনের সময় নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং বন্দরের বিভিন্ন সড়কে র‌্যাবের চেকপোস্ট ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন নারায়ণগঞ্জের নিরাপত্তায় ১ হাজার ৪০০ র‌্যাব, ৮ হাজার পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসারের পাশাপাশি অন্যান্য ফোর্স ছিল। র‌্যাব গঠনের পর এই প্রথম কোনো শহরে একসঙ্গে এত র‌্যাব মোতায়েন হলো।
ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আইভী এবং শামীম ছাড়াও প্রবল বিক্রমে ছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। ভোটের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেও তার আনারস প্রতীকে ৭ হাজার ৬১৬ ভোট পড়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত বন্দরসহ আরও কয়েকটি এলাকার ভোটাররা তৈমুরের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার খবর জানতেন না। অন্য তিন প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের নেতা আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী গরুর গাড়ি মার্কায় ৬ হাজার ৬১২ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৭ বছরের তরুণ ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম জীবন তালা প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৮৫৫ ভোট। শরীফ মোহাম্মদ হাঁস প্রতীকে পান ১ হাজার ৪৯৩ ভোট।
রাত পৌনে ১টায় রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান জানান, নির্বাচনে ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৯৪ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৬ হাজার ২৬৪ ভোট। ভোট প্রদানের হার ৬৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
ভোট থেকে সরে যাওয়ার পাশাপাশি গতকাল তৈমুর আলম ভোট দিতেও যাননি। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ছিলেন। নেত্রীর নির্দেশে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সম্পত্তি বিক্রি করে নির্বাচনে নামলেও শেষ পর্যন্ত ভোট করতে পারলেন না তিনি।
এদিকে ফল ঘোষণার শুরুতেই আইভীর বড় ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার খবরে শহরে শহীদ জিয়া হল ও আইভীর বাসার সামনে উৎসবের আয়োজন বসে। যত বেশি কেন্দ্রের ফল আসতে থাকে ততই বাড়তে থাকে ব্যবধান; উৎসবের রঙও যেন ততই বাড়ে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর অফুরান ভালোবাসায় নারায়ণগঞ্জবাসী স্বাগত জানায় নবগঠিত সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জের জন্য নতুন আলোর বার্তা হাতে তিনি হাজির হয়েছেন বলেও দাবি করেন আইভীর অনেক কর্মী।
সন্ধ্যায় ফল ঘোষণার শুরুর দিকে নগরের দেওভোগে আইভীর বাসভবনের সামনে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তার বাসা থেকেই মাইকিং করে কর্মী-সমর্থকদের ফল ঘোষণার স্থান জিয়া হলের সামনে অবস্থান নিতে বলা হয়। যত সময়ই লাগুক না কেন ফল নিয়ে ঘরে ফেরার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান তিনি। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে আইভীর কর্মীরাও জিয়া হল ঘিরে রাখেন।
প্রথম মেয়র নির্বাচনের লড়াইয়ে আইভী তার দলকে পাশে পাননি। অনেক দেন-দরবারের পর নাগরিক কমিটির প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ে নামেন তিনি। এর আগে ১৯৭৪ সালে যখন নারায়ণগঞ্জে প্রথম পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকাও একইভাবে নির্বাচিত হন। দলের সমর্থন না পেয়ে তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে জয়ী হন। আবার ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সর্বশেষ মেয়র হিসেবে জয়ী হন আইভী।
দলের সমর্থন চেয়ে না পেয়েও নাসিক নির্বাচনে দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবিচল থাকেন আইভী। নিজের অতীত কাজের অভিজ্ঞতা বিচার করে নিজেই ঘোষণা দেন, তার সঙ্গে আছে নারায়ণগঞ্জের বিপুল জনতা। এ মানুষের ভালোবাসায় তিনি জয়ী হবেন। নানা আশঙ্কা আর প্রতি মুহূর্তে নতুন নাটকীয়তার পর অবশেষে আইভী প্রমাণ করলেন, তার বিচার-বিশ্লেষণ এবং আত্মবিশ্বাসে এতটুকু ফাঁক ছিল না।
রাতে কন্ট্রোল রুম থেকে ফল ঘোষণার পর আইভী সাংবাদিকদের সঙ্গে তার বাসায় কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, দল-মতের ঊধর্ে্ব উঠে সবাইকে নিয়েই নতুন সিটি করপোরেশন গড়ে তুলতে চান তিনি। তিনি বলেন, জয় হয়েছে সত্য ও সুন্দরের। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের জয় হয়েছে। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধরে রেখেই এগিয়ে যাবেন তিনি।
চলতি বছরের মে মাসে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর থেকেই নানাভাবে আলোচনায় ছিল নারায়ণগঞ্জ। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমসহ দেশবাসীর চোখ স্থির হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের দিকে। নাসিক উপাখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত হন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সাবেক পৌর মেয়র হিসেবে নির্বাচনে তিনি তার দল আওয়ামী লীগের সমর্থন চান; কিন্তু দল থেকে সমর্থন পাননি। প্রথমে কিছু না বললেও পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়ে দেন, সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানই দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী। এরপর শামীম ওসমানের সঙ্গে প্রচারে যোগ দেন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষেও জোর প্রচারে নামেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। মাঝখানে সেলিনা হায়াৎ আইভী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এসএম আকরামসহ দলের কিছু স্থানীয় নেতাকর্মী আর নারায়ণগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মী এবং এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন। ফলে নারায়ণগঞ্জে শুরু হয় অভূতপূর্ব নির্বাচনী যুদ্ধ। শামীম ওসমান আর তৈমুর আলম হয়ে ওঠেন দু'দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রার্থী আর আইভী হয়ে ওঠেন আপামর নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রার্থী।
শুরু থেকেই দল সরকারে থাকায় রাষ্ট্রীয় সুবিধার বিষয়টি শামীম ওসমান পাবেন_ জনমনে এমন ধারণাও বদ্ধমূল হয়। আর তৈমুরের সঙ্গে দেশের অপর বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। আইভী নামেন স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা আর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে। এর মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে চলে নানা অঙ্ক। সেই অঙ্ক দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে নির্বাচন কমিশন হঠাৎ সেনা মোতায়েনের পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে। অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা গ্রাস করে নাসিক নির্বাচনকে। কিন্তু এ আশঙ্কাও এতটুকু টলাতে পারেনি আইভীকে।
২৭ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর যারা : নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়জয়কার। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতেই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ২৭টি ওয়ার্ডে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন_ আওয়ামী লীগের ১নং ওয়ার্ডে মোঃ আবদুর রহিম (আপেল), ২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম (সিংহ), ৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মোঃ শাহ জালাল বাদল (পদ্ম ফুল), ৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নূর হোসেন (পদ্ম ফুল), ৫নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র হাজি মোঃ শফিকুল ইসলাম বাবুল (পানপাতা), ৬নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র সিরাজুল ইসলাম (আপেল), ৭নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আলী হোসেন আলা (ক্রিকেট ব্যাট), ৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের রুহুল আমীন (টিউবওয়েল), ৯নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র ইস্রাফিল প্রধান (আপেল), ১০নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র হাবীব তৌহিদ আহম্মদ (চাঁদ), ১১নং ওয়ার্ডে বিএনপির জমশের আলী ঝন্টু (হাতি), ১২নং ওয়ার্ডে বিএনপির শওকত হাশেম শকু (আপেল), ১৩নং ওয়ার্ডে বিএনপির মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ (পদ্ম ফুল), ১৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনিরুজ্জামান মনির (বৈদ্যুতিক পাখা), ১৫নং ওয়ার্ডে বাসদের অসিতবরণ বিশ্বাস (ঘুড়ি), ১৬নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ওবায়েদ উল্লাহ (হাতি), ১৭নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র আলমগীর ইসলাম (পদ্ম ফুল), ১৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কামরুল হাসান মুন্না (হাতি), ১৯নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ফয়সাল মোঃ সাগর (টিউবওয়েল), ২০নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র মোঃ হোসেন (টিউবওয়েল), ২১নং ওয়ার্ডে বিএনপির হান্নান সরকার (মোরগ), ২২নং ওয়ার্ডে বিএনপির সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া (বৈদ্যুতিক পাখা), ২৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুলাল প্রধান (সিংহ), ২৪নং ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির আফজাল হোসেন (বৈদ্যুতিক পাখা), ২৫নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র এনায়েত হোসেন (পদ্ম ফুল), ২৬নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন আনু (পদ্ম ফুল), ২৭নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সিরাজুল ইসলাম (টিউবওয়েল)।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী যারা : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৬ জন মহিলা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে যে ৯ জন নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন_ ১নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র মাকসুদা মোজাফফর (ফুটবল), ২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা (বই) , ৩নং ওয়ার্ডে বিএনপির আয়োশা আক্তার দিনা (কলস), ৪নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র মিনোয়ার বেগম (বই), ৫নং ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির শারমিন বিনি্ন (বৈদ্যুতিক বাল্ব), ৬নং ওয়ার্ডে বিএনপির আফসানা আফরোজ (কলস), ৭নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র মাকসুদা খানম (বই), ৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ইসরাত জাহান খান (উড়োজাহাজ) এবং ৯নং ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র শাহী ইফাৎ জাহান মায়া (ডাব)।
আইভীর এজেন্টদের হুমকি :সামগ্রিকভাবে ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলেও সকালের দিকে কিছুটা উত্তেজনা ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ এবং শহর এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে আইভীর এজেন্ট না থাকা নিয়ে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন, আগের রাতে বিভিন্ন এলাকায় শামীম ওসমানের ক্যাডাররা হুমকি দেওয়ায় তার অনেক এজেন্ট কেন্দ্রে যেতে পারেননি।
অভিযোগ ওঠে, বিএনপি সমর্থিত তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই রাতে আইভীর এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এবং মিজিমিজি এলাকায় দু'একজনকে মারধরও করা হয়।
ভোটের প্রথম প্রহরে নারায়ণগঞ্জ শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং বন্দর এলাকার ১৫টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বুথে আইভীর দোয়াত কলম মার্কার কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। তবে সব কেন্দ্রেই শামীম ওসমানের দেয়াল ঘড়ি মার্কার এজেন্ট পাওয়া যায়। সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকার এমডবি্লউ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১০টি বুথের মধ্যে আটটিতে আইভীর কোনো পোলিং এজেন্ট ছিলেন না। একই চিত্র দেখা যায় মিজিমিজি পাইনাদী রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও সফুরা খাতুন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
মিজিমিজি পশ্চিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আটটি বুথের মধ্যে একটি বুথে একজন নিজেকে আইভীর এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। তবে তিনি আইভীর মার্কা হিসেবে দেয়াল ঘড়ির কথা বলেন, যেটি আসলে শামীম ওসমানের মার্কা। ৯৪নং সুমিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একটি বুথের (পুরুষ, কক্ষ-১) আইভীর এজেন্ট আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, আগের রাতে আইভীর এজেন্ট তালিকার অনেককে মারধর করে এবং ভয়ভীতি দেখায় শামীম ওসমানের ক্যাডাররা। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আকরাম বলেন, তার কেন্দ্রে চারটি বুথের মধ্যে মাত্র দু'জনের তালিকা এসেছে দোয়াত কলম মার্কার পক্ষ থেকে। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা বলেন, তাদের কাছে দোয়াত কলম মার্কার প্রার্থীর পক্ষ থেকে মোট বুথসংখ্যার অর্ধেক নাম দিয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ কারণে এজেন্ট না থাকার বিষয়ে কিছুই করার নেই। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারই এ ধরনের কথা বলেন। তবে এজেন্ট না থাকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে কোনো অভিযোগ করেননি সেলিনা হায়াৎ আইভী।
এদিকে চট্টগ্রামে প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হলেও নারায়ণগঞ্জে এসে ব্যাপক ভিত্তিতে এটি ব্যবহার করা হয়। আর প্রথম ব্যবহারেই এ বিষয়ে সাফল্য পায় নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইভিএম প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে মুহূর্তে ভোট এবং ক্ষণিকে ফল পাওয়ার চেয়েও বড় প্রাপ্তি কারচুপিহীন ভোট।

No comments

Powered by Blogger.