মিলনমেলা-নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কালের কণ্ঠ by মাহমুদুল হাসান

ড়ির কাঁটা সকাল ১০টা ছুঁই ছুঁই। ক্লাস শুরু হতে খুব বেশি দেরি নেই। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ৮ নম্বর গেটের পাশের লিফটের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে কালের কণ্ঠ পত্রিকা পড়ছেন রিয়াসাত। তিনি ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের স্নাতক (বিবিএ) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এই প্রথম কালের কণ্ঠ হাতে পেয়েছি। একটু দেখে নিই। পত্রিকাটি বেশ সমৃদ্ধ মনে হচ্ছে। এখন থেকে নিয়মিত পড়ব।'সাত দিনের বিশেষ আয়োজন দেখে হা পিত্যেশ করে রিয়াসাত বললেন, 'ইস, এত দিনে কত কিছুই না মিস করেছি।'


একই বিভাগের শিক্ষার্থী নিশি বলেন, "মিস হওয়ার সুযোগ নেই, শুরু থেকেই আছি কালের কণ্ঠের সঙ্গে। হাঁটতে হাঁটতেই পত্রিকা পড়ে নিচ্ছি। সামনে ঈদ। তাই ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য চাই নতুন জায়গা। দেখে নিলাম 'অন্য কোনোখানে' বিভাগটি।"
তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে কালের কণ্ঠের নিয়মিত আয়োজনের তৃতীয় পর্বে পত্রিকার পাঠক সংগঠন শুভসংঘের তত্ত্বাবধানে গতকাল রবিবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে চলে মিলনমেলা।
মমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। নিজের অভিব্যক্তি জানাতে ছুটে এসেছেন শুভসংঘের বন্ধুদের কাছে। ভালো লাগার বিষয় এমন আবেগের তারে বাঁধা যে তিনি মনের কথা জানাতে এসে ভাষা হারিয়ে ফেলেন। শুধু বলতে পারলেন, তিনি কালের কণ্ঠের নিয়মিত পাঠক।
কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য সাহা জানালেন কালের কণ্ঠের প্রতি তাঁর ভালো লাগার কথা। নিয়মিত পড়েন। তাই পত্রিকাটির প্রতি তাঁর আবদারও বেশি। বললেন, 'নিউজের প্রতি আরো গুরুত্ব দিতে হবে।'
অনিন্দ্যর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফারহানা আক্তার বলেন, 'এ টু জেড, অন্য কোনোখানে বিভাগটি আমার ভালো লাগে। আমি নিয়মিত পাঠক।'
কথা হয় বিবিএর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদের সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, "কালের কণ্ঠ পত্রিকাটি ইতিমধ্যে অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছে, অনেক খবর থাকে, শিক্ষাবিষয়ক অনেক পাতা থাকে, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও কাজে লাগে। 'টেক প্রতিদিন' পড়ে বিশ্বের নতুন তথ্য জানতে পারি। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আমার কাছে অন্য পত্রিকা থেকে কালের কণ্ঠকে একটু আলাদাই মনে হয়।"
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বয়েজ লাউঞ্জে টেলিভিশন চলছে। সেদিকে কারো কোনো খেয়াল নেই। সবার হাতে কালের কণ্ঠ। কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে, আবার কেউ একাই পড়ছেন। এর মধ্যে একজন বুকের ওপর পত্রিকা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সাফরান ও আশিকুর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন। সাফরান জানান, বাসায় নিয়মিত কালের কণ্ঠ রাখা হয়। আশিক বলেন, 'আগে অল্প অল্প পড়া হতো, আজ পত্রিকাটি পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। এখন থেকে নিয়মিত পড়ব।'
গার্লস লাউঞ্জের চিত্রও একই রকম। মেয়েরাও দল বেঁধে কালের কণ্ঠ পড়ছে। কারো এক হাতে খাবার, অন্য হাতে কালের কণ্ঠ। সালমা, সুইটি, দিবা, নাসরিন, লোপা, স্মৃতি, লিমা, তিশরা জানান, বিনোদনমূলক ম্যাগাজিনগুলো তাঁদের ভালো লাগে। তাঁদের মধ্যে কেউ বললেন মগজ ধোলাই ম্যাগাজিনে দেওয়া ধাঁধা মেলানোর কথা। একজন কিছুটা চিৎকার করেই বললেন, "আমার পছন্দ 'রাজনীতি' ম্যাগাজিনটি।" একজন বললেন রাশিফলের কথা।
ভালো লাগার পত্রিকা কালের কণ্ঠের সৌজন্য সংখ্যা হতে পেয়ে অনেকটা উৎসবের আমেজই তৈরি হলো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে।
এ আমেজের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকের সামনে হাজির কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই ঔপন্যাসিককে কাছে পেয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা আরো বেড়ে যায়। তাঁকে স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা। এরপর তিনি ক্লাবগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এনএসইউর ক্লাব কার্যক্রমের প্রশংসা করে ইমদাদুল হক মিলন ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, 'ক্লাবগুলোর সাফল্যের কথা পুরো জাতিকে জানাতে চাই।' তরুণ সমাজের মধ্যে তথ্য সচেতনতা ও পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে এনএসইউর ক্লাবগুলো ও কালের কণ্ঠকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মিলন লেখালেখি, ছবি তোলার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেন। পরে ক্লাবগুলোর সভাপতিদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ফটোসেশনে অংশ নেন ইমদাদুল হক মিলন।
এনএসইউর সোস্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের সভাপতি নাবিদ আহম্মেদ বলেন, 'গত বইমেলায় মিলন ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি। এবার কথা বলে ভালো লাগছে।' কালের কণ্ঠের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নাবিদ ভবিষ্যতে তাঁদের ক্লাব কার্যক্রমে পত্রিকাটির সহযোগিতা চান।
আর্থ ক্লাবের সভাপতি ইউনুস আহমেদ সুজয় কালের কণ্ঠের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হোক_এমনটাই কামনা করেন।
এনএসইউর গ্যালারির একপাশে ফুটবল নিয়ে একদল শিক্ষার্থী খেলায় মেতেছেন, আরেক পাশে চলছে ক্রিকেট খেলা। গ্যালারিতে দর্শকের কমতি নেই। প্রায় সবার হাতেই কালের কণ্ঠ। পিউপা, ইশান, এলান, অনিকা, তৌসিফ, আসিফ ও অন্তু জানান, পড়াশোনার বাইরে তাঁদের খুব একটা সময় থাকে না। তার পরও তাঁরা কালের কণ্ঠ পড়েন। সুন্দর খবর পাওয়া যায় এতে। তাঁরা হলরুমে কালের কণ্ঠ পড়েন বলে জানান। এরই ফাঁকে পিউপা উচ্চ স্বরে পত্রিকা পড়তে শুরু করেন, আর অন্য সবাই মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
অর্থনীতি বিভাগের মিথিলা, সিনথিয়া এনএসইউর পূর্ব গ্যালারিতে গাছপালায় সুসজ্জিত নির্জন স্থানে বসে ধাঁধা মেলাতে ব্যস্ত। কালের কণ্ঠের পরিচয় পেয়ে জানালেন নিজেদের ভালো লাগার কথা, মগজ ধোলাই ও টিনটিন টুনটুন তাঁদের পছন্দ। পড়ে অনেক মজা পান বলে জানান তাঁরা।
উত্তর গ্যালারিতে প্রতিদিনের মতোই আজও আড্ডায় মেতেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে আজকের বিষয় কালের কণ্ঠ। কারণ একটাই, ইতিমধ্যে তাঁরা জেনে গেছেন, কালের কণ্ঠের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের কথা। জিসান, ইসহাক, ইমু, রাজিব, শিমুল সবাই কালের কণ্ঠের ভক্ত। সব সময় থাকতে চান কালের কণ্ঠের সঙ্গেই। সাগর, জাকির, তৌকির, জুুরাইন জানান, তাঁদের পুরো পরিবারই কালের কণ্ঠের ভক্ত।
এনএসইউর সবচেয়ে বড় গ্যালারি হলো দক্ষিণ গ্যালারি। এখানকার সুন্দর পরিবেশ, আড্ডা_সব কিছুর মধ্যেও শিক্ষার্থীদের হাতে কালের কণ্ঠ। কালের কণ্ঠ পত্রিকার জয়জয়কার এনএসইউর পুরো ক্যাম্পাসে। ভবনের সিঁড়ি, লিফট, ল্যাব, লাইব্রেরি, রিডিংরুম, স্টাডি হল_কোথাও বাদ নেই। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, সংবাদপত্রে পড়ালেখার অনেক কিছু থাকে। কালের কণ্ঠ হলে তো আর কথাই নেই।
গতকাল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে কালের কণ্ঠের মিলনমেলা চলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আয়োজনটি সম্পন্ন করেছেন কালের কণ্ঠের শুভসংঘের বনু্লরা। সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী নাজিয়া, ইরোদা, কথা, ইউসুফ, নাহিয়ান, তুষার, জুনায়েদ, নূপুর, আদিব, আকিবসহ অনেকে। আরো ছিলেন কালের কণ্ঠের সার্কুলেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হারুন অর রশীদ ও উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ।

No comments

Powered by Blogger.