অবশেষে কেজিতে তিন টাকা কমছে লবণের দাম-ঋণপত্র খোলার ৩০ দিনের মধ্যে ডিম ও লবণ জাহাজীকরণ by রাজীব আহমেদ

সংকটের কথা বলে গত কয়েক মাসে কেজিতে ১৩ টাকা বাড়ানোর পর লবণের দাম তিন টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন মিলমালিকরা। গতকাল সোমবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা বলেছেন, আজ (মঙ্গলবার) থেকে নতুন দামে লবণ সরবরাহ করা হবে।


আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে লবণ কেজিপ্রতি ৩৩ টাকার বদলে ৩০ টাকায় বিক্রি হবে বলে জানান তাঁরা।
রমজানের আগে লবণ ও ডিমের দাম কমাতে এ দুটি পণ্য আমদানিতে গতি আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য আমদানিকারকদের ঋণপত্র খোলার ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য জাহাজে উঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অপরিশোধিত লবণের ঘাটতির কথা বলে বড় বড় লবণ মিলমালিকরা মোড়কজাত কয়েকটি ব্র্যান্ডের লবণের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৩ টাকায় উঠিয়েছেন। প্রায় একই হারে বেড়েছিল বিভিন্ন মানের খোলা লবণের দামও। মিলমালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অপরিশোধিত লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু তাতে বাজারে প্রভাব না পড়ায় পরিশোধিত লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়ারও চিন্তা করা হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তালিকা অনুযায়ী, এক বছর আগে প্রতি কেজি লবণের দাম ছিল ১২ থেকে ২০ টাকা। আর বর্তমান দাম ১৮ থেকে ৩৫ টাকা! পরিশোধন পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে লবণের মানে ও দামে পার্থক্য হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাজারে কেজিপ্রতি ৩৩ টাকা, ৩০ টাকা ও ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে লবণ বিক্রি হচ্ছে। মিলমালিকরা জানান, সব ধরনের লবণের দামই কেজিতে তিন টাকা কমবে।
বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও পূবালী শল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক পরিতোষ কান্তি সাহা জানান, দেশের শীর্ষস্থানীয় মিলমালিকরা গত রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সভায় লবণের দাম কমানোর আশ্বাস দেন। এর জন্য তাঁরা দুই দিন সময় চান। ওই বৈঠকে পূবালী, মোল্লা, এসিআই, ইফাদ, ফ্রেশ ও কনফিডেন্স লবণের মালিক কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। এর পরই মিলমালিকরা দাম কমালেন। সোমবার থেকে নতুন প্যাকেটের গায়ে কম দাম লেখা শুরু হয়েছে। এটা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছতে দুই-এক দিন লাগবে।
এসিআই শল্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর হোসেন ও কনফিডেন্স লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান মো. আকতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরাও দাম কমানোর কথা জানান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) মতে, এ বছর লবণের চাহিদা ১৫ লাখ টনের কিছুটা বেশি হতে পারে। উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ টনের কাছাকাছি। আগের বছরের কিছু মজুদ ছিল। সংস্থাটি বলেছিল, সব মিলিয়ে বছর শেষে সর্বোচ্চ দুই লাখ টন লবণ আমদানির দরকার হতে পারে। তবে মিলমালিকরা দাবি করেছেন দেশে লবণের চাহিদা ১৮ লাখ টন। এ জন্য তাঁরা চার লাখ টন লবণ আমদানির সুযোগ চেয়েছিলেন। সরকার প্রথমে দুই লাখ টন আমদানির অনুমতি দেয়। পরে সীমা তুলে নেওয়া হয়। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মিলমালিকরা ঋণপত্র খুলতে পারবেন। দেশে মিলের সংখ্যা প্রায় ৪০০। গতকাল পর্যন্ত দুই লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টন লবণের ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
পরিতোষ সাহা জানান, আমদানি করা লবণ এখনো দেশে পৌঁছেনি। ওই লবণ এলে দাম আরো কমবে। আগামী মাসের শুরুর দিকে লবণ বেশি হারে দেশে আসতে শুরু করবে।
এদিকে গতকাল প্রধান আমদানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ঋণপত্র খোলার এক মাসের মধ্যে লবণ ও ডিম জাহাজীকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। জানা গেছে, আমদানি করা পণ্য রোজার আগে বাজারে আনতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে এর বিরোধিতা করেছেন পরিতোষ কান্তি সাহা। তিনি বলেন, লবণ পরিবহন করলে জাহাজের ক্ষতি হয়। সে কারণে জাহাজ মালিকরা লবণ পরিবহন করতে চান না। জাহাজ খুঁজে পেলে লবণ আসতে সময় লাগে না। কিন্তু ঋণপত্র খোলার এক মাসের মধ্যে জাহাজ খুঁজে লবণ জাহাজীকরণ করা কঠিন।

No comments

Powered by Blogger.