উন্নয়ন বরাদ্দ-বিরোধীদের এলাকাবঞ্চিত

সরকারি নানা উন্নয়ন বরাদ্দে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা বৈষম্যের শিকার_ সমকাল এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ২৩ জুন। এতে বলা হয়েছে, বিরোধীদলীয় এলাকা উন্নয়নবঞ্চিত থাকা 'ভাগ্যের লিখন'। গত প্রায় দুই যুগ সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় চলেছে দেশ। তার আগের দেড় দশক ছিল সামরিক ও রাষ্ট্রপতির শাসন।


এই পুরো সময়টিতেই এ ধরনের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির চর্চা করেছে ক্ষমতায় থাকা সব দল। কেন এরূপ আচরণ তার ভালো ব্যাখ্যা মিলবে না। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদ অধিবেশন এক টানা বয়কট করে চলেছেন। এ জন্য তাদের অভিযুক্ত করা চলে। কিন্তু এ কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারকি কিংবা আমব্রেলা প্রকল্পের ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করার সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করার যুক্তি নেই। সমকালের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ৪১টি আসনে সরেজমিন অনুসন্ধানের ভিত্তিতে। এতে দেখা যায়, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অর্ধশতাধিক ডিও লেটার সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের টেবিলের 'হিমাগারে'। বিষয়টি কেবল অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের কাজ বলে মনে করার কারণ নেই। এর পেছনে সরকারি উচ্চমহলের ইশারা থাকে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ এবং আওয়ামী লীগের নেতা উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ স্বীকার করেছেন, 'বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের এলাকায় আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।' এ কাজ অন্যায় ও বিধিবহির্ভূত এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকে এলাকাভিত্তিক এবং যে এলাকায় যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তার জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ অন্য কারও কাছে প্রদানের সুযোগ নেই। সরকার কেবল একটি যুক্তিই দিতে পারে এবং সেটা হচ্ছে পাল্টাপাল্টির মনোভাব। অতীতে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে এবং এ কারণে এখন তারা শোধ তুলছেন। কেউ এ ধরনের মনোভাবকে 'ভাগ্যের লিখন' বলতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্য। সংসদ সদস্যদের এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি অংশ নেওয়া উচিত কি-না সে বিতর্ক রয়েছে। তবে আইনের বিধান যেটা রয়েছে সেটা অবশ্যই মান্য হওয়া উচিত। জনস্বার্থে তারা যেসব সুপারিশ করেন সেসব অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমান জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের শক্তি সীমিত। ক্ষমতাসীনরা এই সামান্য শক্তিকেও কেন মেনে নিতে পারছে না, সে প্রশ্ন উঠেছে। গণতন্ত্র সহিষ্ণুতার কথা বলে, ভিন্নমতকে গুরুত্ব প্রদানের পক্ষে জোর সওয়াল করে। এ ধরনের শাসন ব্যবস্থা সংখ্যালঘু মতকে বিশেষ সম্মান জানাতে শেখায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। এসব এখন নিছকই কেতাবি কথা হয়ে পড়েছে।
বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা এলাকায় উন্নয়ন কাজে গাফিলতি কিংবা ব্যয়ে অনিয়ম করলে প্রশাসন সেটা সহজেই ধরে ফেলতে পারে। বিরোধীদের এলাকার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা বরং এ পথে অগ্রসর হলে তাতে বুদ্ধিমত্তার ছাপ থাকত। সুশাসনের প্রত্যাশা থেকে সংসদে বিরোধীদলীর সংসদ সদস্যদের এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব সরকারি দলের মহিলা সংসদ সদস্যদের দেওয়া হয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই। সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ অর্থ ও অন্যান্য সুবিধার একটি অংশ দলীয় পর্যায়ে ভাগবাটোয়ারা হয়, এটাই দস্তুর। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের এলাকার জন্য বরাদ্দ যাদের হাতে পড়ে তারা এ পথ অনুসরণ করেন না, সেরূপ ভাবা কঠিন বৈকি।
 

No comments

Powered by Blogger.