২৭০ কোটি টাকা লোকসানের দায় কার-শ্বেতহস্তী বিমান

বিশ্বজুড়ে এয়ারলাইনস-সংক্রান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে রাষ্ট্র নিজেকে সম্পৃক্ত করে লাভের আশায়, বাড়তি অর্জন থাকে জাতীয় পতাকার আন্তর্জাতিকীকরণ। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, বিমানের শরীর থেকে লোকসানের দুর্গন্ধ কিছুতেই মুছে ফেলা যাচ্ছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বহু বছরের দাবিদাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিমান রূপান্তরিত হয়েছিল কোম্পানিতে।


আশা করা গিয়েছিল জগদ্দল পাথর, যা দলীয় সরকারের আমলে সরানো যাচ্ছিল না, সেটা এবার সরেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার সবার সাধারণ আশার গুড়ে বালি ফেলে একজন আমলাকে প্রেষণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে। কিন্তু তার পরও সেখানে সান্ত্বনা ছিল, কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর বিমান লাভের মুখ দেখেছিল। অথচ নির্বাচিত সরকারের গত তিনটি অর্থবছরে বিমান ক্রমাগত লোকসান দিচ্ছে। তিন বছরে লোকসান যথাক্রমে ১৫ কোটি, ৬৫ কোটি ও ১৯০ কোটি টাকা। আমরা আশা করব, সরকার বা সংসদীয় কমিটি অবিলম্বে এই লোকসানের কারণ চিহ্নিত করে এর দায়দায়িত্ব যারই হোক না কেন, জনগণের সামনে তার নামধাম প্রকাশ করবে।
এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল জামালউদ্দিনকে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং তাঁরই এককালের সহকর্মী এয়ার কমোডর (অব.) জাকিউল ইসলামকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু জনাব ইসলাম ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তবে গোড়াতেই বিমানের চেয়ারম্যান, যিনি মিগ-২৯ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্যতম সহ-অভিযুক্ত, তিনি বিমানের নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ে সব ক্ষমতা প্রকারান্তরে কুক্ষিগত করেন। তিনি বিমান পরিচালনায় এককভাবে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। বেশির ভাগ সময় তিনি বিমানের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিচালিত আন্দোলনের তোপের মুখে ছিলেন। এখনো রয়েছেন।
বিমান পরিচালনা পর্ষদ সারা বিশ্বে পেশাদারি, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি আকর্ষণীয় এবং সবচেয়ে দায়িত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ৪১ বছরে সামরিক-বেসামরিক আমলাদের রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনায় বিমানের শীর্ষ নির্বাহী পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিষ্ঠার সঙ্গে বিমানে চাকরি করে যাঁরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তাঁরা কখনোই রাজনৈতিক সরকারগুলোর কাছে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হননি।
আমরা মনে করি, বিমানে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ এবং প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তার মূলে রয়েছে নেতৃত্বের সংকট। পরিচালনা পর্ষদকে পেশাদার ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ঢেলে সাজাতে হবে। ‘বিমান বাঁচাও’ আন্দোলনের কার্যকারণ নির্মোহভাবে সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। সংসদের স্থায়ী কমিটি বিমানের চেয়ারম্যানকে ইতিমধ্যেই তিরস্কার করেছে। সংশ্লিষ্ট মহল বিশ্বাস করে, বিমানের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিবিশেষ ও কোটারি স্বার্থের প্রাধান্য দেওয়ার মানসিকতা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার বিমানের বর্তমান চেয়ারম্যানকে স্বপদে বহাল রাখতে ধনুর্ভঙ্গ পণ না করলেই উত্তম।

No comments

Powered by Blogger.