অভিমত ভিন্নমত

কোথায় যাচ্ছি আমরা দুই মেরুর রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বলি আবারও জনসাধারণ। রাজনীতিকদের জনহিতাকাঙ্ক্ষার বুলি আবারও মিথ্যা প্রমাণিত হলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সর্বদা পরস্পরকে বেকায়দায় ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়।


নিজেদের জনমুখী কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় অপরকে আক্রমণ করে স্বস্তি পেতে চায়। প্রতিবারই আক্রান্ত হয় রাষ্ট্র ও জনগণ। কোনো দলই এ ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করে না।
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের কোটি কোটি মানুষের মতো তরুণ প্রজন্ম ভেবেছিল, জাতীয় রাজনীতিতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে। বাস্তবতা বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও জনগণের স্বপ্নকে জলে নিক্ষেপ করতে তাদের বাধে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসনের সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে মহাজোট সরকারের প্রহসন অপ্রত্যাশিত। জনগণের সমস্যা-সংকটকে পাশ কাটিয়ে সরকার ও বিরোধী দল অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক মাঠ গরম রাখছে। বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে সরকারের সহিষ্ণুতার পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল।
বিএনপির চেয়ারপারসনকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর বিএনপি হরতাল আহ্বান করে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা সারা দেশে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হরতালের কর্মসূচি প্রমাণ করল, বিএনপির রাজনীতি তারেক-কোকো এবং সেনানিবাসের বাড়িকেন্দ্রিক। ঈদের কয়েক দিন আগে আহূত হরতাল লাখ লাখ মানুষের বাড়ি ফেরাকে অনিশ্চিত করে তুলেছিল, তাদের বিপাকে ফেলেছিল। ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আনুষঙ্গিক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বিঘ্নিত হয়েছে। বিএনপির ১৪ নভেম্বরের হরতালে জনগণ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। এর মধ্যেই আগামী ৩০ নভেম্বর তারা আবার হরতাল ডাকল। এটা মোটেও ঠিক হলো না।
অপরদিকে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক অপরিণত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তাদের ওপর জনগণের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। কোটি কোটি টাকা অপচয় করে নামফলক পরিবর্তন করা হচ্ছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, বিদ্যুৎ-গ্যাস-কয়লাক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে আত্মঘাতী চুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব, বিরোধী দলের প্রতি উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, নারী নির্যাতন এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে বহুমুখী টালবাহানা করে সরকার নিজের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। পোশাকশিল্পে মালিকপক্ষ শ্রমিককে পূর্বঘোষিত বেতন ও উৎসব ভাতা দিচ্ছে না। প্রশাসনের অমনোযোগিতার কারণে ঈদ উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের ঘাটতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। সরকার ও বিরোধী দল কেউই জনগণের এসব সংকট প্রতিকারের কথা না বলে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে। এই প্রতিহিংসার রাজনীতি দুই দলের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে। দেশকে বাঁচাতে তাই জনগণকে নতুন করে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে হবে।
সাঈদ হোসেন।
saeedhossain@ymail.com

জাতীয় বৃক্ষ
আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত করার আগে মতামত জরিপসহ নিবিড় পর্যালোচনা করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি। কারণ এর মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের জাতীয় পরিচয় তুলে ধরব। সাধারণত দেশের সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক-ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে জাতীয় বৃক্ষের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাই এটি কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়।
ভারতের জাতীয় বৃক্ষ বট। এর ফল মানুষের বিশেষ কোনো কাজে আসে না। তবু একে জাতীয় বৃক্ষের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণ তার বিশালত্ব ও সৌন্দর্য। অন্যান্য দেশের জাতীয় বৃক্ষের বেলাতেও মূলত এসব দিকই বিবেচনায় আনা হয়। আর আমরা একটি সাধারণ গাছকে জাতীয় বৃক্ষ করলাম! ফল খাওয়ার জন্য এবং বাণিজ্যিক কারণে মানুষ এমনিতেই আমগাছ লাগাবে। তাই বলে একে জাতীয় বৃক্ষ করতে হবে কেন?
অনেকে অনেক গাছের নাম নিশ্চয়ই প্রস্তাব করেছেন। তার মধ্যে নিশ্চয়ই অশ্বত্থ ছিল। আমি মনে করি, এটিকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই সবচেয়ে ভালো হতো। আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষে বারবার ঘুরেফিরে উচ্চারিত একটি নাম ‘রমনা বটমূল’। আসলে সেখানকার বৃক্ষটি অশ্বত্থ। আবার এক অশ্বত্থের তলে বসে সিদ্ধার্থ ধ্যান করেছিলেন বলে সেটির নাম হয় বোধিবৃক্ষ। এটি বেশ পরিচ্ছন্ন গাছ। অতীতে মুনি-ঋষিরা এ বৃক্ষের তলে বসে তপস্যা করতেন। এ গাছ বড় ঝড়কে বাধা দেয়, দুর্যোগ মোকাবিলা করে।
আমরা তো কত নামই পাল্টাই। জাতীয় বৃক্ষ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তটি কি পুনর্বিবেচনা করা যায় না?
লীলা খান, কলাবাগান, ঢাকা।

রদবদলেই গতিশীলতা!
সম্প্রতি প্রশাসনের বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ বলা হয়েছে কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা নিয়ে আসা। কিন্তু একজন আমলার জায়গায় আরেকজন আমলার প্রতিস্থাপনই কি বাস্তব সমাধান? আমলাদের অদক্ষতার একটি বড় কারণ হিসেবে তাঁদের বর্তমান নিয়োগ-প্রক্রিয়া এবং পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে চাকরির আবর্তন এবং দায়দায়িত্বসমূহ বিশেষভাবে দায়ী। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২৮টি বিভিন্ন ক্যাডারে লোকবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে। জনপ্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে কার্যত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিস। চাকরিজীবনে তাঁরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন। এর ফলে তাঁদের কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কাজ করার ফলে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, তা কাজে লাগানোর বিশেষ সুযোগ থাকে না। তাই এ ব্যাপারে ভেবে দেখার অবকাশ আছে। সবকিছু সম্পর্কে আবছা অভিজ্ঞতা অর্জন হলেও কোনো মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে কোনো গভীর জ্ঞান অর্জিত না হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়ন ধীরগতিতে হওয়াই স্বাভাবিক। উপরন্তু অভিজ্ঞতা অর্জন করে যখন তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাবলীল হন, ততক্ষণে তাঁদের বদলির সময় হয়ে যায়।
তা ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে সংশ্লিষ্ট ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা পদায়ন না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যেও কাজের প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়। সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়া ও সমান সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দায়ী করে থাকেন। ক্যাডার সার্ভিসগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করায় সরকার কখনোই গতিশীল আমলাতন্ত্র পায়নি। অধিকন্তু নিয়োগ-প্রক্রিয়ার সব স্তরে অতিমাত্রার কোটাপ্রথা মারাত্মকভাবে প্রশাসনের মান হ্রাস করেছে।
আমলাতন্ত্র পক্ষে না থাকলে নির্বাচনসহ নানা কাজে অসুবিধা হবে ভেবে কোনো সরকারই এসব বিষয় অনুধাবন করা সত্ত্বেও ব্যাপক পুনর্গঠন-প্রক্রিয়া গ্রহণ করে না। বর্তমান সরকারও এর বাইরে যেতে পারেনি। সরকারের সামনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপাতভাবে অনেক অপ্রিয় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যে পথে হাঁটার সৎসাহস আমাদের কোনো রাজনৈতিক দলই দেখায়নি। সৎসাহস দেখিয়ে প্রশাসনিক ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আমলাতন্ত্রকে সত্যিকারভাবে গতিশীল না করলে কেবল পছন্দের কর্মকর্তাকে সচিব নিয়োগ বা পরিবর্তন-সংবাদ তৈরি করতে সাহায্য করা ছাড়া আর কোনো কিছুই অর্জনে সহায়তা করবে না।
মোহাম্মদ সারোয়ার
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

নিরাপত্তা কার জন্য?
শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ’ গঠন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের যেকোনো পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। এ ধরনের বিশেষ পুলিশ বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। প্রধানত যেখানে হত্যা-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং যেখানে জনগণের বিক্ষোভ-আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না, সেখানে এ ধরনের বিশেষ পুলিশ কাজ করে। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি-লুটপাট, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় হত্যাকাণ্ড, ক্রসফায়ার ও গুপ্তহত্যা, যৌন নির্যাতন এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। সারা দেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাস যে নিকৃষ্ট পর্যায়ে গেছে, তার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের স্থলে দেশব্যাপী অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা দরকার।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিদেশিদের প্ররোচনায় নিরাপত্তার নামে বর্তমানে সারা দেশে আন্দোলন ঠেকাতে নানা প্রকার বিশেষ পুলিশ যেমন মেরিন পুলিশ, ক্যাম্পাস পুলিশ ইত্যাদি গঠনের পরিকল্পনা করার কথা শোনা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পোশাকশ্রমিক, বন্দরশ্রমিক, নৌশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবির আন্দোলনের কারণে মালিকপক্ষ অনিরাপদ বোধ করতে পারে। সরকার ও মালিক উভয়কেই বুঝতে হবে এবং অনুভব করতে হবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের চেয়ে অধিক বেতন দিয়েও কারখানাগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে শ্রমিকেরা বেতন-ওভারটাইম-বোনাস ঠিকমতো পান না, মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয় না, বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই, প্রতিবছর আগুনে পুড়ে বহু শ্রমিক মৃত্যুবরণ করলেও দুর্ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মুদ্রাস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশচুম্বী মূল্যের কারণে বর্তমান মজুরি দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব। তবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের মূল উদ্দেশ্য কী? ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কি মালিকপক্ষের জন্য? তাদের মুনাফার নিরাপত্তার জন্য?
সরকারকে গরিব, খেটে খাওয়া, মেহনতি সাধারণ মানুষের প্রতি গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে। নিরাপত্তা বিধান করতে হবে শ্রমিকদের। তাদের মানুষের মতো বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে জনবিরোধী সব সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
রহমান শিহান
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.