বকেয়া বিদ্যুৎ বিল-সরকারি সংস্থার দায়িত্বহীনতা

সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কাছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার খবরটি আমাদের জনপ্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বহর পরিমাপক। অথচ বার্ষিক বাজেট বরাদ্দে বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার পাওনা-দেনা ও উন্নয়নসংক্রান্ত ব্যয় পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব প্রাক্কলন করা হয়ে থাকে।


তার পরও একটি সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পাওনা অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শোধ না করে দেনাদার প্রতিষ্ঠান নিচেষ্ট থাকে কী করে? সোমবার সমকালের রাজধানী পাতায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত রোববার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। যেসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে, তাদের প্রতিনিধিরা সবাই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্ন হলো :ব্যয় বরাদ্দ থাকার পরও সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা সময়মতো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি কেন? আর যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যয় বরাদ্দের সময় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের অর্থ পরিশোধ করার বিষয়টি আমলে নেয়নি, সেসব প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকদের কি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বা অযোগ্যতার দায়ে অভিযুক্ত করা যায় না? একজন বেসরকারি গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিল সময়মতো পরিশোধ না করার কারণে যখন জরিমানা পর্যন্ত গুনতে হয়, তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও কেন একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল যথাসময়ে পরিশোধ না করা হলে তার জন্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করার ব্যবস্থা থাকতে পারে। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কর্তাভজা নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে সব দোষ নন্দ ঘোষের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পাওয়ার অবকাশ থাকবে না। সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী বিদ্যুৎ বিল আদায়ের জন্য বিদ্যুৎ সচিব শিগগিরই তাদের কাছে চিঠি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এতে বকেয়া বিল পরিশোধে সবাই এগিয়ে আসবে, তেমনটা মনে করার কারণ নেই। এ জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যবেক্ষণের উদ্যোগও থাকতে হবে, আমলাতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্ম্যে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা আদায়ের উদ্যোগটি যেন ব্যর্থ হয়ে না যায়।
 

No comments

Powered by Blogger.