ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই-নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই

চাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের হম্বিতম্বি কিংবা বাণিজ্যমন্ত্রীর ফাঁকা বুলিও কোনো কাজে আসছে না। তার ওপর বিরোধী দলের উপর্যুপরি হরতাল ক্রেতাসাধারণের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।


বুধবারের প্রথম আলোতে তিনটি খবরই ছিল বাজারসংক্রান্ত। প্রধান শিরোনাম ছিল: আমনের বাম্পার ফলনেও বাড়ছে চালের দাম। অন্য দুটি খবর সয়াবিন ও ডাল নিয়ে।
এ বছর আমনের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম বাড়ার যুক্তি নেই। আন্তর্জাতিকভাবেও এ বছর চালের উৎপাদন বেড়েছে এবং বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। অভ্যন্তরীণ চালের মজুদের পরিমাণ আট লাখ টনের ওপরে। একে সন্তোষজনকই বলা যায়। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী পরিমাণের তুলনায় বেশি ধান কিনে মজুদ করে রাখায় বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। এ অবস্থায় ধান-চাল সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যুক্তি দেখানো হচ্ছে, বাজারে যেহেতু ধান-চালের দাম বেশি, সে কারণে কৃষকের কাছ থেকে কিনে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তে ফড়িয়া ও মজুদদারেরা লাভবান হবে।
অন্যদিকে সয়াবিন, ভোজ্যতেল, ডাল ও চিনির দামও বাড়ানো হয়েছে নানা কারসাজিতে। এতে রাষ্ট্রীয় বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান টিসিবির ভূমিকাও কম নয়। বাজারে ডালের দাম কেজিপ্রতি ৭২ টাকা হলেও টিসিবি ডিলারদের কিনতে বলেছে ৯১ টাকায়। ডিলাররা বেশি দামে কিনলে বেশি দামেই তাঁরা বিক্রি করবেন। স্বভাবতই বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেও ‘ঝামেলা’র কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘ঠিক হয়ে যাবে।’ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ঝামেলা ঠিক হওয়ার আগেই কয়েক দফা দাম বাড়ে এবং তা কখনোই কমানো সম্ভব হয় না।
সয়াবিনের দাম এক লাফে প্রতি লিটারে ১৩ টাকা বাড়ার পেছনে রয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের রহস্যজনক আচরণ। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে প্রতিবার ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন তাঁরা। এ জন্য কখনো তাঁরা আন্তর্জাতিক বাজারের, কখনো বন্দরে সময়মতো পণ্য খালাস না হওয়ার দোহাই দেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে কমানোর দৃষ্টান্ত নেই।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, তা মোকাবিলায় সরকার অনেকটাই নির্বিকার। নিয়মিত বাজার মনিটরিং কিংবা ব্যবসায়ীদের কারসাজি রুখতে কোনো পদক্ষেপ নেই। মাঝেমধ্যে মন্ত্রীর সদুপদেশ এবং ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতির কোনো প্রভাবই বাজারে লক্ষ করা যায় না। বাজারের এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই বিরোধী দল উপর্যুপরি হরতাল ডেকে ক্রেতাসাধারণের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। হরতালের কারণে পণ্য পরিবহনে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তা নিশ্চয়ই তাদের জানা আছে। তার পরও এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি তারা কীভাবে নিতে পারে, সেটাই ভাবার বিষয়। জনগণের জন্য যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা কি জনগণের দুর্ভোগের কথা ভাববেন না? বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত মনিটরিং যেমন প্রয়োজন, তেমনি পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন করাও জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.