বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ও বর্ষসেরা রানারআপ: ২০১০ ও ২০১১সিদ্দিকুর রহমান-‘আরও অনেক স্বপ্ন পূরণই বাকি’

গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার হাতে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ব্যাংককের বিমান ধরেছেন। তারপর গেলেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখান থেকেই ই-মেইলে সিদ্দিকুর রহমান সাক্ষাৎকার দিলেন মাসুদ আলমকে
 গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ২০১০ বর্ষসেরা পুরস্কার পেয়েছেন।


তাৎক্ষণিকভাবে আপনার উচ্ছ্বাসটা ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন?
সিদ্দিকুর রহমান: আসলে এর আগেও এই অনুষ্ঠানে আমি একবার গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরেছি খালি হাতে। এবার পেলামই, তাও আবার দুটি! ২০১১ সালের বর্ষসেরা রানারআপও হয়েছি। দুটি পুরস্কার একসঙ্গে পেয়ে আমার আনন্দের মাত্রাটা আরও বেড়ে গেল।
 সেই অনুভূতিটা এখন যদি আবার একটু বলেন...
সিদ্দিকুর: অনুভূতি আগের মতোই। কোনো পুরস্কারই একার নয়। এই পুরস্কার আমার, আমার পরিবারের, আমার ফেডারেশনের এবং আমার সব শুভানুধ্যায়ীর। গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ, এই পুরস্কার সবাইকে আরও ভালো করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।
 একটা লম্বা সময় পার করে এলেন। কেমন ছিল এই যাত্রা?
সিদ্দিকুর: আমি বলব, যাত্রাটা এখনো চলছে। শেষ হলে বলব। তার পরও এটুকু আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি, আমার খেলার উন্নতির জন্য এখনো সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করি। বিশ্রাম নিই না। আমার নিজের জন্য নয়। দেশের পতাকা বহন করছি। দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনতে চাই।
 আপনার জীবনের গল্প রূপকথার মতো। বলবয় থেকে আজ জাতীয় নায়ক। বলবয় জীবনের কথা আবার একটু শুনতে চাই...
সিদ্দিকুর: এটা তো সবাই জানে। নতুন করে আর কী বলব! লেখাপড়ার খরচ জোগানোর জন্য গলফ কোর্সে আসা। একই সঙ্গে পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া। যখনই একটা ভালো কিছু অর্জন করি, তখনই পেছনের কথা আমার মনের কোণে ভিড় করে। এটা আমাকে ভালো করার জন্য অনেক প্রেরণা দেয়। আমার আগের জীবনটা ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। ওই অধ্যায় আমি সব সময়ই মনে করি। সেটি পেরিয়ে আজ আমি খেলোয়াড়। ব্যস, এটুকুই।
 প্রথম যেদিন কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে গেলেন, সে দিনটির কথা মনে পড়ে? তখন আপনার বয়স কত?
সিদ্দিকুর: এটা অবশ্যই মনে পড়ার মতো ঘটনা। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। দেখে পরিবেশটা ভালো লেগে যায়। খেলাটার প্রতি ঝোঁক আসে। তখন বয়স হবে ৭-৮।
 ছোটবেলায় আপনি অনেক কষ্ট করেছেন জানি। কখনো কি ভেবেছেন, একদিন বড় খেলোয়াড় হবেন?
সিদ্দিকুর: আশা ছিল, আমি একজন পেশাদার গলফ খেলোয়াড় হব। এখনো অনেক স্বপ্ন পূরণ করার বাকি।
 গলফের শুরুর দিকের কথা একটু শুনতে চাই। প্রথম ক্লাব কে দিল? মানে কীভাবে ওটা পেলেন?
সিদ্দিকুর: গলফে প্রথম এসে বড় ভাই এবং ক্লাবের সদস্যদের খেলতে দেখতাম। আমাদের একজন স্যার ছিলেন। ওনার কাছ থেকে কিছু টাকা দিয়ে একটি ক্লাব দুই-তিনজন মিলে ভাড়া নিতাম এক রাউন্ড গলফ খেলার জন্য।
 আপনার বাবা-মা তখন কী বলতেন? ওনারা আপনার গলফ খেলাটাকে কীভাবে নিয়েছিলেন?
সিদ্দিকুর: আমরা যারা গলফ ক্লাবে চাকরি করতাম বা যাঁরা এখনো করেন, তাঁদের বাবা-মায়েরা সব সময় চিন্তামুক্ত থাকেন এই ভেবে, আমার ছেলে ভালো জায়গায় আছে। গলফে কোনো বিপদ নেই।
 প্রথম পেশাদার সফরটা কেমন ছিল?
সিদ্দিকুর: প্রথম আমি ইন্ডিয়ান ট্যুর করি। আর এই ট্যুরের প্রথম টুর্নামেন্টে একটু নার্ভাস ছিলাম। কারণ পেশাদার হিসেবে ওটা ছিল প্রথম টুর্নামেন্ট।
 ২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেন জিতলেন। সেই দিনটিতে নিশ্চয়ই অনেক আপ্লুত ছিলেন...
সিদ্দিকুর: আসলে সেই দিনটা ছিল আর একটা স্বপ্ন পূরণের ধাপ। আমি খুব খুশি ছিলাম সেই দিনটায়।
 আপনি এখন অনেক ব্যস্ত। এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক গলফ কোর্স থেকে আরেক কোর্স। এই অভিজ্ঞতা কেমন?
সিদ্দিকুর: খারাপ নয়। বরং খুব ভালো লাগে যখন আমার সঙ্গে বাংলাদেশ নামটা যুক্ত থাকে। বাংলাদেশের গলফার ভালো খেলতে পারে, এটা দেখে অনেকে অবাকও হন।
 আমাদের দেশে ক্রিকেটাররা তুলনামূলক বিখ্যাত। তাঁদের নাম-প্রচার বেশি। নিজেকে কি বঞ্চিত মনে হয়?
সিদ্দিকুর: মোটেও নয়। আমার খুব ভালো লাগে, যখন ক্রিকেটাররা ভালো করে।
 আপনি বাংলাদেশের গর্ব। তবে আপনি নিজেকে নিয়ে কতটা গর্বিত?
সিদ্দিকুর: আগে বাকি স্বপ্নগুলো পূরণ হোক।
 বিখ্যাত গলফ খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন?
সিদ্দিকুর: একেকজনের কাছ থেকে একেকটা শেখার আছে।
 ব্যাংককে শিরোপা জিততে জিততে রানারআপ। এ বছর আর কী কী টুর্নামেন্ট আছে আপনার?
সিদ্দিকুর: ব্যাংককের টুর্নামেন্টটা ভালো হয়েছে। তবে আরও ভালো হতো যদি সেকেন্ড না হয়ে প্রথম হতাম। এখন কোরিয়াতে আছি। এ বছর জাপান ও ইউরোপ ট্যুরে কোয়ালিফাই করতে চাই। আগস্ট থেকে সারা বছরই টুর্নামেন্ট।
 গলফে তো অনেক টাকা। মানুষের কৌতূহল, আপনি এত টাকা কী করেন?
সিদ্দিকুর: প্রাইজমানি পাই ঠিকই, তবে দেশভেদে ট্যাক্স কাটে ২০-২৫ ভাগ। এরপর ম্যানেজার, কোচ, বিমান টিকিট, হোটেল, ফুড সবকিছুই নিজে বহন করতে হয়। তাই টাকা যে খুব বেশি থাকে তা নয়।
 আপনি গলফার না হলে কী হতেন?
সিদ্দিকুর: এটা বলতে পারছি না। সময় বলে দিত।
 শেষ প্রশ্ন। কখনো কি শুয়ে শুয়ে ভাবেন, কোথায় ছিলেন আর এখন কত উঁচুতে উঠলেন!
সিদ্দিকুর: হ্যাঁ, তা তো ভাবিই। এখন আমি এশিয়ান র‌্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম, দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। এ পর্যন্ত যা অর্জন করেছি, আমি সব সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। উনি আমাকে এ পর্যন্ত এনেছেন, এটা আমার জন্য অনেক কিছু।

No comments

Powered by Blogger.