আর কত মৃত্যুর পর কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়বে?-একসঙ্গে ১২টি প্রাণ

একটি দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু। এর মধ্যে এক পরিবারেরই নয়জন! এই পরিবারটি এখন কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কি বাইরের কারও পক্ষে সম্ভব? আমরা শুধু অনুমানই করতে পারি! বুধবার কেরানীগঞ্জের কদমপুরে ঢাকা-মাওয়া সড়কে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।


সব মিলিয়ে মাইক্রোবাসের ১৩ আরোহীর মাত্র একজনের হূৎপিণ্ড এখনো সচল রয়েছে। আমরা নিহত সবার আত্মার শান্তি কামনা করছি। এই পরিবারটির প্রতি রইল আমাদের গভীর শোক ও সমবেদনা।
বাচ্চাদের স্কুলের গ্রীষ্মকালের ছুটির সময়টি কাটাতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরশিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির সর্দারের পরিবারের সদস্যরা। একটি সড়ক দুর্ঘটনা ব্যক্তিমানুষ, পরিবার ও সমাজের কত বড় ক্ষতি করতে পারে, সে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমাদের দেশের মানুষ নিয়মিতই হয়ে আসছে। এই দুর্ঘটনায় আমরা যে ১২ জনকে হারালাম, তার মধ্যে সাতজনই শিশু, যাদের আমরা দেশের ভবিষ্যৎ বলেই সব সময় বিবেচনা করে থাকি। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে?
এই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে যে বর্ণনা পাওয়া গেছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটি ওভারটেক করতে গিয়েছিল, আর যে বাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে, সেটির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না। প্রতিদিন এত দুর্ঘটনা ঘটছে, এত মৃত্যু—এর পরও আমাদের কারোরই কেন জানি টনক নড়ছে না। যাঁরা চালক, তাঁরা তো কোনো নিয়মনীতি মানছেনই না, আর এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মেনে চলতে বাধ্য করা যাদের দায়িত্ব, সেই সরকার বা প্রশাসনের যেন কোনো মাথাব্যথাই নেই। এখানে লাইসেন্স ছাড়া চালক গাড়ি চালাতে পারেন, গাড়ি চালাতে গিয়ে কোনো নিয়মনীতি না জানলেও কেউ কিছু বলার নেই। লেন না মানলে, গতির নির্দিষ্ট সীমা না মানলে কোনো মহাসড়কে কোনো যানবাহনকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না। দেশে যেভাবে যানবাহন চলাচল করছে, তা এককথায় নৈরাজ্যকর। সবচেয়ে বিস্ময়ের ও দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিদের অনেকেই এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পক্ষে সাফাই গান, অবস্থান নেন।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। বুধবার আমরা হারালাম ১২ জনকে। আর কত দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পর আমাদের টনক নড়বে?

No comments

Powered by Blogger.