মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা-স্বতন্ত্রধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান by ওয়ালী উল্লাহ আরমান

শিল্পাঞ্চল বলে খ্যাত গাজীপুর জেলার গাছা ইউনিয়নের আলাদা একটি সুনাম আছে দেশজুড়ে। ফলে উন্নয়নের ছোঁয়া দেখা যায় এ এলাকার সর্বত্রই। সেই গাছা ইউনিয়নের কামারজুরী গ্রামের শান্ত-নিবিড় পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি দীনি মাদ্রাসা।


স্থানীয়দের কাছে বড় মাদ্রাসা বলে পরিচিত 'মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা'টি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪.৮৫ শতাংশ জায়গার ওপর। শিক্ষাদরদি ব্যক্তিত্ব আলহাজ ইস্রাফিলের পৃষ্ঠপোষকতায় মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তিনিই মাদ্রাসার জমিদাতা ও মোতোয়ালি।
গাছা ইউনিয়নে অবস্থিত অন্য ২৪টি মাদ্রাসা থেকে এই মাদ্রাসাটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। নির্মাণাধীন ছয়তলা ভবনের তিনতলার কাজ শেষ হওয়ার পথে। প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র এখানে ইলমে দীন অর্জন করছে ১৭ জন শিক্ষকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থেকে। মাদ্রাসার শিক্ষা বিভাগ থেকে শুরু করে পরিচালনা পদ্ধতিসহ যাবতীয় বিষয়ে পরামর্শক হিসেবে রয়েছেন আলেমে দ্বীন হজরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। আর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাদ্রাসার মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে 'মাওলানা' সনদ অর্জনকারী আলেম আলহাজ হজরত মাওলানা মামুনূর রশীদ।
বর্তমানে মাদ্রাসায় আবাসিক মক্তব বিভাগ, স্বতন্ত্র হিফজুল কোরআন বিভাগ ও কিতাব বিভাগে মাধ্যমিক স্তর অর্থাৎ জামাতে হেদায়াতুন্নাহু পর্যন্ত ক্লাস চালু আছে। প্রতি বছর ক্লাস বাড়িয়ে মাদ্রাসাটি অচিরেই দাওরায়ে হাদিসে উত্তীর্ণ করা হবে বলে জানালেন মাদ্রাসার মুহতামিম। মক্তব বিভাগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজির পাশাপাশি সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআনে কারিম তেলাওয়াত ও দৈনন্দিন জীবনে অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দোয়া-দরুদ এবং মাসআলা-মাসায়েল শিখে থাকে। হিফজ বিভাগে তাজবিদসহ পূর্ণ কোরআনে কারিম মুখস্থ করানো হয়। এই মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর ৮-৯ জন করে ছাত্র হাফেজে কোরআন হিসেবে সনদ নিচ্ছে। অন্যদিকে কিতাব বিভাগে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী জামাতে হেদায়াতুন্নাহু পর্যন্ত ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। এই মাদ্রাসার ছাত্ররা গাজীপুরসহ জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। মাদ্রাসায় রয়েছে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা। রয়েছে একটি পাঠাগার। মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রতিবছর নিজ উদ্যোগে তিনটি বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশ করে থাকে। মূলত স্বতন্ত্রধারার একটি কওমি মাদ্রাসার প্রতিচ্ছবি হলো মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা।
আমরা জানি, দীনি মাদ্রাসাগুলোতে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা হয়। যে শিক্ষার ফলে সে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজে সর্বদা কাজ করবে। মানুষে মানুষে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পরিহার করে ভ্রাতৃত্ব, মায়া, মমতা ও ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় করার পক্ষে অবস্থান নেবে। জুলুম, নির্যাতন পরিহার করে মানুষকে উন্নত চরিত্র গঠনের প্রতি উৎসাহিত করবে। মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।
 

No comments

Powered by Blogger.