অক্তাবিও পাসের কবিতা-অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ

মেহিকোর কবি অক্তাবিও পাস (১৯১৪-১৯৯৮) ছয় মাসের জন্য প্রথম ভারতবর্ষে আসেন ১৯৫১ সালে, অকিঞ্চিৎকর কূটনৈতিক কাজে। ১৯৬২ সালে দীর্ঘ ছয় বছরের জন্য আবার আসেন রাষ্ট্রদূত হয়ে—পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও আফগানিস্তানের দায়িত্ব নিয়ে। ভারতবর্ষ তাঁর জীবন পাল্টে দেয়।


এ অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথমে বেরোয় একটি পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থ, ইস্ট স্লোপ। পরে গদ্যপদ্যের আরও বহু বই। তিনি বলতেন, গদ্যগুলো ভারতবর্ষ নিয়ে লেখা তাঁর কবিতার টীকাভাষ্য মাত্র। এখানকার সব কবিতাই ইস্ট স্লোপ থেকে নেওয়া। শেষেরটি নয়। সেটি তাঁর অতিবিখ্যাত কবিতাগুলোর একটি। পাস ১৯৯০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

অপর
নিজের জন্য সে বানিয়েছিল একটি চেহারা।
তার পেছনে
সে বেঁচেছে মরেছে পুনর্জন্ম পেয়েছে
বহুবার।
তার মুখে এখন
সেই চেহারার বলিরেখা।
তার বলিরেখার কোনো মুখ নেই।

লেখালেখি
লিখি আমি এই বর্ণরাজি
দিবস যেভাবে তার প্রতিমাপুঞ্জের ছবি এঁকে
তাদের ওপর দিয়ে বয়ে যায়
কখনো ফেরে না

প্রচ্ছায়া
ব্যক্তি যদি ধূলিকণা
সমতল পার হয়ে ওই যারা যায়
তারা তো মানুষ

হুমায়ুনের সমাধিসৌধ
বোলতার তর্কমুখরতা
বানরের দ্বন্দ্ববাদ
পরিসংখ্যানের কলতান
সবারই সে বিরোধিতা করে
(পাথর বাতাস পাখপাখালিতে গড়া
গোলাপের তুঙ্গ এক শিখা
পানির ওপরে চুপ নিথর সময়)

শব্দহীনতার বাস্তুকলা

রাস্তা
শব্দহীন দীর্ঘ রাস্তায়
অন্ধকারে হাঁটি এবং হোঁচট খাই, পড়ি,
উঠে দাঁড়াই, আবার হাঁটি অন্ধ, দুই পা
মাড়িয়ে যায় নীরব নুড়ি, শুষ্ক ঝরাপাতা।
পেছনে কেউ আমার, যায় মাড়িয়ে নুড়ি, পাতা:
আস্তে হাঁটি, হয় সে মন্থর;
দৌড়ে চলি, দৌড়ে চলে সেও
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি:
কই, কেউ তো নেই।

চতুর্দিক অন্ধকার, দরজাহীন সব,
পদধ্বনি আমার শুধু আমাতে জাগ্রত,
মোড়ের পরে মোড়ের পাক আমাকে দেয় ঠেলে
এমনই এক অমোঘ রাস্তায়
প্রতীক্ষায় যেখানে কেউ নেই, আমার নেয় না পিছু আর,
সেখানে নিই এমন কারও পিছু
যে জন খায় হোঁচট, ওঠে, আমাকে দেখে বলে:
কই, কেউ তো নেই।

No comments

Powered by Blogger.