আবারও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা

প্রতিরোধের উপায় নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে প্রায়ই এমন সব মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যে দেশব্যাপী শোকের ছায়া পড়ে যায়। চারটি পরিবারের নিকটাত্মীয়-পরিজন মিলে দুদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ যাওয়ার পথে বুধবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ড্রাইভারসহ তরতাজা ১২ জন মানুষের জীবনাবসান ঘটল।


সাকুরা পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস মহাসড়কের কদমপুর এলাকায় মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিলে সেটি ছিটকে খাদে পড়ে এবং একজন গৃহকর্মী ছাড়া সবাই প্রাণ হারায়। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন নারীসহ এক বছরের শিশুও রয়েছে। যথারীতি আইন ভঙ্গকারী বাসের বেপরোয়া চালক পালিয়ে গেছে, এ নিয়ে যথারীতি একটি মামলা হয়েছে এবং যথারীতি যোগাযোগমন্ত্রী শোক জ্ঞাপন করেছেন। আমরাও যেন যথারীতি সম্পাদকীয় লিখে দায়িত্ব পালন করছি। অব্যাহত এই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর পাশাপাশি শত শত লোক পঙ্গুত্ব বরণ করছে। অসংখ্য মানুষের জীবন হয়ে উঠছে প্রাণহীন-ছন্দহীন। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। এই দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা যন্ত্রণাদায়ক প্রাণ সংহারের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না কি?
বিগত কয়েক বছরে রাস্তাঘাটের যৎসামান্য উন্নতি হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বেড়েছে দ্রুত মানুষের সংখ্যা, সেই সঙ্গে বেড়েছে যানবাহনের পরিমাণ। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে একটি কথা উল্লেখ করা দরকার, বর্তমানে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বিষয়ে যে আইন আছে, তাতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে এবং এটি জামিনযোগ্য। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীরা মনে করেন, এ শাস্তির মেয়াদ আরো বাড়াতে হবে এবং এটি বিচারকালীন জামিন অযোগ্য করতে হবে। আমাদের ভাষ্য হলো, কঠোর আইনের পাশাপাশি আমাদের সবার সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। লক্ষ করা যায়, দেশের বিশেষ করে মহাসড়কগুলোর সেতু এলাকা সংকীর্ণ, দ্রুত চলাচলের এই সড়কগুলোর আঁকাবাঁকা এবং কোথাও কোথাও রয়েছে অমসৃণ বা ভাঙা। এ সমস্যাগুলো অতিদ্রুত দূর করতে হবে। সেই সঙ্গে গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন অত্যন্ত জরুরি একটি কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারকেই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেশবাসী আর দেখতে চায় না। আমরা বুধবারের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি।

No comments

Powered by Blogger.