ডেসটিনি’র ১২ কর্মকর্তাকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার: ডেসটিনি’র বিষয়ে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ তলব ও জিজ্ঞাসাবাদের তালিকা অধিকতর দীর্ঘ হচ্ছে। এ তালিকা হতে পারে ৪০ থেকে ৪৫ জনের। ইতিমধ্যে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল আমিন এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহসহ ১২ জনকে জেরা করেছে দুদক। এদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৩রা জুন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আরও ৪ পরিচালককে। এদিকে সমবায় অধিদপ্তরের ২ কর্মকর্তা ও ডেসটিনি’র ২ উপদেষ্টাকে তলব করে গতকাল দুদক পৃথক চিঠি দিয়েছে। দুদক উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার স্বাক্ষরিত এসব চিঠি অনুযায়ী তাদেরকে ৫ই জুন দুদকে হাজির হতে হবে। আগামী সপ্তাহে ডেসটিনি’র ট্রি প্ল্যান্টেশনের চেয়ারম্যান ও গ্রুপের পরিচালক লে. জেনারেল হারুন-অর রশিদ (অব.) সহ কয়েকজনকে দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্যে চিঠি দেয়া হতে পারে। ডেসিটিনি’র বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গতকাল যাদের চিঠি দেয়া হয়েছে তারা হলেন- সমবায় অধিদফতরের উপ-পরিচালক (মার্কেটিং) খন্দকার রিয়াজুল ইসলাম, একই অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা, বেস্ট এয়ারের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন এবং ইঞ্জিনিয়ার শাম্‌স। দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানায়। সূত্র মতে, গত ৩ দিনে যেসব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের দেয়া বক্তব্য, দুদকের দেড় মাসের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য এবং ডেসটিনি থেকে জব্দকৃত নথিপত্রের মধ্যে অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রফিকুল আমিনের স্ত্রী ফারাহ দিবাসহ ৪ পরিচালককে। অন্য পরিচালকরা হলেন- হোসনে আরা ইসলাম, সেলিমা রহমান, মিঠু রানী বিশ্বাস। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে ফারাহ দিবা দুদকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, দুদক আমাকে ব্যবসায়িক নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেছে। আমি সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়েছি। দুদকের আচরণে আমি সন্তুষ্ট। একই ধরনের তথ্য জানিয়ে হোসনে আরা ইসলাম জানান, আমি দুদকে আমার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিয়ে এসেছি। দুদক তদন্ত করে দেখুক কিছু পাওয়া যায় কিনা। আমার জানা মতে, কোন অনিয়ম, দুর্নীতি বা প্রতারণা করিনি। ব্যক্তিগত একাউন্টেও কোন টাকা সরিয়ে নিইনি। যা কিছু করেছি সব নিয়মের মধ্যে থেকেই। আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে তা সত্য নয়। এদিকে আগামী রোববার দুদকের জেরার মুখোমুখি হতে হবে ডেসটিনি’র গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, বেস্ট এভিয়েশনের ডিরেক্টর আবুল কালাম আজাদ এবং ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের পরিচালক জাকির হোসেনকে।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল সাংবাদিকদের জানান, অনুসন্ধানাধীন বিষয়ে আগাম কথা বলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি করতে চাই না। এর সঙ্গে দেশের অসংখ্য মানুষের স্বার্থ জড়িত। বিষয়টি বিবেচনা করে দুদক তদন্ত করছে। অনুসন্ধানে দুদকের তফসিলভুক্ত কোন অপরাধ ধরা পড়লে অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য ও ডেসটিনি কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। কোন ঘাপলা ধরা পড়লে মামলা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে দুদক তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিচ্ছে। মামলা হলে আদালতে গিয়েও তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবে। দুদকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ডেসটিনি গ্রুপের কর্মকর্তারা গত তিন দিন যে বক্তব্য ও নথিপত্র জমা দিয়েছে এতে গরমিল পাওয়া গেছে। তাদের ১২ বছরের লেনদেন স্বচ্ছভাবে হয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়ার পাশাপাশি, আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বৈধতা, আইনসম্মতভাবে বিনিয়োগ হয়েছে কিনা, গ্রাহকদের বিশ্বাস ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা, কেন বিতর্কিত সম্পত্তি কেনা হলো, সরকারি জমিতে গাছ লাগানো হয়েছে কেন, ব্যক্তিগত একাউন্টে টাকা সরানোর কারণ কি প্রভৃতি বিষয়সহ ৩৮টি প্রশ্নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.