আইন অমান্য করতে পারেন না আইনি সংস্থার সদস্যরাও-পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হেফাজতে আসামির মৃত্যু তথা বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ন্যূনতম চৈতন্যোদয় ঘটেছে বলা যাবে না। রাজধানীর রমনা থানায় পুলিশের হেফাজতে মারা যান বাবুল গাজী নামের অটোরিকশাচালক।


আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁর মুক্তির জন্য রমনা থানার উপপরিদর্শক আলতাফ হোসেন দুই লাখ টাকা দাবি করেন। ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। অন্যদিকে গুলশানে পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন মিজান নামের এক যুবক। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে বাবুল গাজী এবং ছিনতাইকালে বন্দুকযুদ্ধ মিজান গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যান।
পুলিশি হেফাজতে কেউ মারা গেলে নানা গল্প ফাঁদা হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে একজন আসামি পালিয়ে গেলে সে দায়ও পুলিশকে নিতে হবে। থানায় আসামিকে নেওয়ার পর উৎকোচ নিয়ে দরকষাকষির ঘটনা নতুন নয়। বাবুল গাজী বা মিজানের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয়েছে ভাবার কারণ নেই। বন্দুকযুদ্ধে আহত আসামির স্ত্রীর কাছে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ চাওয়া কি অপরাধ নয়?
পুলিশ বলেছে, একটি চোরাই অটোরিকশার মালিক ছিলেন বাবুল গাজী। চোরাই অটোরিকশা কেনা বা তার মালিক হওয়া নিঃসন্দেহে অপরাধ। কিন্তু তা পুলিশি হেফাজতে বাবুল গাজীর মৃত্যুর বিষয়টিকে স্বাভাবিক বা যৌক্তিক করে তোলে না। দুই পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা গুরুতর এবং নিরপেক্ষ সংস্থা দ্বারা তদন্ত করা প্রয়োজন।
নিরাপত্তামূলক হেফাজতে বা কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি যেকোনো মূল্যে রোধ করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বা অপরাধ দমনের পথ এটি নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে সদস্য বা সদস্যদের হেফাজতে আসামি মারা গেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো অজুহাত চলতে পারে না। গুলশানে বন্দুকযুদ্ধে এবং রমনা থানায় পুলিশি হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাই পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে।

No comments

Powered by Blogger.