রেলে ই-টিকিটিং by একরামুল হক শামীম

বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং সেবা শুরু হয়েছে গত ২৯ মে থেকে। এর মাধ্যমে অনলাইনে রেলওয়ের টিকিট কাটা সম্ভব হবে। ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে শুরুতে প্রতিদিন মোট টিকিটের ১০ শতাংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাটা যাবে। রেলমন্ত্রী অবশ্য আশা করছেন পর্যায়ক্রমে রেলওয়ের পুরো টিকিটিং ব্যবস্থা ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হবে।


এটা দারুণ আশাব্যঞ্জক। তবে ই-টিকিটিং সেবা চালুর মধ্যেও কিছুটা ফাঁকি রয়ে গেছে। মোবাইল টিকিটিং সেবায় কেবল ভাগ বসিয়েছে ই-টিকিটিং। কারণ ই-টিকিটিংয়ের জন্য টিকিটের নতুন কোনো বরাদ্দ নেই। এর আগে মোট টিকিটের ২৫ শতাংশ মোবাইল টিকিটিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হতো। তা কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশ টিকিট ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড কিংবা ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে কাটা যাবে। মোবাইল টিকিটিংয়ের ব্যাপারটিও চালু করা হয়েছিল গ্রাহকদের অধিকতর সুবিধার জন্য। ঘরে বসেই যাতে সহজে রেলের টিকিট সংগ্রহ করা যায় তাই উদ্দেশ্য ছিল। ই-টিকিটিংয়ের উদ্দেশ্যও এক। ফলে মোবাইল টিকিটিংয়ের ২৫ শতাংশ না কমিয়ে নতুন বরাদ্দের মাধ্যমে ই-টিকিটিং সেবা চালু করলে অধিকতর যৌক্তিক হতো।
রেলের টিকিট নিয়ে কালোবাজারি হয়_ এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন উৎসব এলে এই কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। ই-টিকিটিং এবং মোবাইল টিকিটিং সেবা অধিক মাত্রায় চালু হলে সেই কালোবাজারি কমে যাবে। এটি রেলওয়ের টিকিট সেবার জন্য ইতিবাচক দিক। তবে নতুন এসব পদ্ধতি যেন ব্যবহারকারীবান্ধব হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। এরই মধ্যে কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে নতুন চালু হওয়া ই-টিকিটিং সেবা নিয়ে। এই সেবা নির্দিষ্ট কিছু ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী নিতে পারছেন। সব ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে টিকিট কাটা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া নিবন্ধন করতে গিয়েও অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। নির্দিষ্ট সাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার পরও অনেকেই ভেরিফিকেশন লিংক পাননি। এছাড়া টিকিট ক্রয়ের সময় ঠিকমতো অর্ডার দিলেও অনেক ক্ষেত্রেই ই-টিকিট না থাকার কথা জানানো হয়। অতিরিক্ত ব্যাংক চার্জের বিষয়টিও সমালোচিত হয়েছে। একটি টিকিট কাটতে ব্যাংক চার্জ দিতে হয় ৪০ টাকা। ই-সেবার জন্য এত বেশি টাকা ব্যাংক চার্জ কেন গ্রাহককে দিতে হবে সেই প্রশ্ন উঠেছে। ব্যাংক কেবল টাকা কেটে রাখার সেবা দিচ্ছে। টাকা কেটে নেওয়ার পর টিকিট সক্রিয় হয়। তা প্রিন্ট নিয়ে রেলওয়ের ই-টিকিটিং বুথে জমা দিলে আসল টিকিট পাওয়া যায়। ফলে টাকা কেটে নেওয়ার মতো সেবার জন্য ৪০ টাকা ব্যাংক চার্জ নেওয়া কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখা উচিত। এ ধরনের অধিক হারের চার্জের জন্যই ই-সেবাগুলো সমালোচিত হয়।
রেলওয়ের ই-টিকিটিং সেবা নিয়ে আরও কিছু অভিযোগ হয়েছে। সেবাটি চালু হওয়ার খবর পেয়ে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে (িি.িৎধরষধিু.মড়া.নফ) ঢুকেছিলাম বিষয়টা দেখতে। এমনিতেই রেলওয়ের সাইটটি খুবই অনাকর্ষণীয়, তার ওপর ই-টিকিটিং সেবা চালু হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে সাইটে তেমন কোনো প্রচার নেই। ই-টিকিট কেনার লিংকটি খুঁজে পেতেই কিছুক্ষণ সময় পার হয়ে গেল। ওয়েবসাইটের নিচের দিকে ছোট ফন্টে একটি হাইপারলিংক তৈরি করে রাখা হয়েছে। অথচ ই-টিকিটিং সেবার জন্য ওয়েবসাইটের আলাদা একটি মেন্যুই থাকতে পারত। তাহলে ব্যবহারকারীদের খুঁজে পেতে সুবিধা হতো। ই-টিকিটিং সেবা নিয়ে আরও প্রচার জরুরি। সমালোচনামূলক বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো রেলওয়ের ই-টিকিটিং সেবার ইতিবাচক বিকাশের স্বার্থেই। বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে গেলে যাত্রীরা ই-টিকিটিংয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবেন এবং রেলপথে ভ্রমণ বাড়াবেন। তেমনটি হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে
বিভাগেরই লাভ।
 

No comments

Powered by Blogger.