প্রয়োজন সব পক্ষের সংযমী আচরণ-হরতালের নিরীহ শিকার

২৭ জুন বিএনপির হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্যে পড়ে গুরুতরভাবে দগ্ধ মোটর মেকানিক ফারুক হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঠাঁই পেয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টায়ও তাঁর প্রাণ রক্ষা পেল না। তিনি মারা গেলেন।


আর হরতালের দিন অফিসে যাওয়ার পথে হরতাল-সমর্থক পিকেটারদের আক্রমণে গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন প্রকৌশলী আবুল কাশেম।
কিন্তু কেন? হরতালের সঙ্গে কী সম্পর্ক ছিল এই দুই নিরীহ নাগরিকের? হরতাল আহ্বানকারী বা তাদের প্রতিপক্ষ—কারোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না আবুল কাশেম বা ফারুক হোসেনের। আবুল কাশেম আর সব দিনের মতো ২৭ জুন সকালে নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন; পথে অকস্মাৎ নেমে আসবে এই বিপর্যয়, তা কি ভাবতে পেরেছিলেন? হরতালের আগের রাতে ফারুক ও তাঁর সঙ্গী সুমন একটি গাড়ি সারিয়ে নিয়ে মিরপুর থেকে ধোলাইখালের দিকে যাচ্ছিলেন। পরদিনের হরতাল ‘সফল করা’র লক্ষ্যে আগাম ত্রাস সৃষ্টির অংশ হিসেবে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের শিকার হতে হবে নিরীহ ফারুক বা তাঁর সঙ্গী সুমনকে—তাঁরা কি দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিলেন কখনো?
হরতালে এমনই এক অনিশ্চিত নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যার ফলে যেকোনো মানুষের জীবনেই হঠাৎ করে নেমে আসতে পারে বিরাট বিপর্যয়। ফারুক হোসেন বা আবুল কাশেমের মতো দুর্ভাগ্য নেমে আসতে পারত যেকোনো ব্যক্তির জীবনে। এ দুজন হরতালের নিরীহ শিকারের অভিন্ন প্রতীক। যেকোনো হরতালের দিনে আমরা যে কেউ পর্যবসিত হতে পারি এমন মর্মান্তিক, বিভীষিকাময় প্রতীকে।
কিন্তু এটা কোনো দৈবদুর্বিপাকের বিষয় নয় যে এ ধরনের ঘটনার দায়দায়িত্ব কারও ওপর বর্তাবে না। কিছু মানুষের দায়িত্বহীন হঠকারী আচরণের ফলেই হরতালের মতো কর্মসূচিতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এবং এটা কেবল ২৭ জুনের হরতাল নয়, সাধারণভাবে সব হরতালের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হরতাল সফল করার নামে হঠকারী, নাশকতামূলক তৎপরতা পরিত্যাগ করতে হবে। যারা হরতালের মতো কর্মসূচি নেয়, তাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার খর্ব না হয়, নিরাপত্তা নষ্ট না হয়, জীবন ও সম্পদের হানি না ঘটে। পিকেটিংয়ের নামে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানাভাবে ত্রাস সৃষ্টি থেকে বিরত থাকতে হবে। হরতালের বিরোধী পক্ষেরও উচিত নয় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হরতাল বানচালের চেষ্টা করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা, শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের উসকানিতে অতি উত্তেজিত না হয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সচেষ্ট হওয়া। সব পক্ষের আচরণই যে সংযত হওয়া উচিত, সে শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করা উচিত এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা থেকে।

No comments

Powered by Blogger.