বিএনপির চার নারী সাংসদসহ ছয় সাংসদও আসামি-বিরোধী দলের ২৯ নেতার বিরুদ্ধে আরেক মামলায় অভিযোগপত্র

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ২৯ নেতার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। সচিবালয়ে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
হরতাল চলাকালে সচিবালয়ে ককটেল নিক্ষেপের মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করে।


এতে বিএনপির চার নারী সাংসদসহ ছয় সাংসদকেও আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত নেতাদের বেশির ভাগই গাড়ি পোড়ানোর মামলায় এখন কারাবন্দী আছেন। এতে বিএনপির চার নারী সাংসদসহ সাত সাংসদকেও আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফেরত দেওয়ার দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে সচিবালয়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই দিনই পুলিশ বাদী হয়ে বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা করে। এর এক মাসের মাথায় এই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলো। মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহা গতকালই মামলাটির বিচার নিষ্পত্তির জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দেন। মহানগর দায়রা জজ আদালত আগামী ২৬ জুলাই অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, একটি মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলকে দমন করতে সরকার এই পথ অবলম্বন করেছে। তিনি দাবি করেন, অভিযোগপত্রের সঙ্গে এজাহারের (এফআইআর) কোনো মিল নেই।
এর আগে একই হরতালের দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় গত ১০ মে বিরোধী দলের ৪২ জন শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই মামলায় গ্রেপ্তার থাকা পাঁচ সাংসদ পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বাকি নেতারা কারাগারে আছেন। জামিন পাওয়া সাংসদদের মধ্যে এম কে আনোয়ার ও মাহবুবউদ্দিন খোকন ছাড়া বাকি তিনজনকে শাহবাগ থানার বিস্ফোরক মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অবশ্য শাহবাগ থানার এই মামলায় গত ১৪ মে মির্জা ফখরুলসহ ১৮ দলীয় জোটের ২৫ নেতাকে ‘পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা না পর্যন্ত’ জামিন দেন হাইকোর্ট। ফখরুল ছাড়া এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আমানউল্লাহ আমান, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মহানগর শাখার সদস্যসচিব আবদুস সালাম, বিএনপির সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সৈয়দা আশিফা আশরাফী, শাম্মী আক্তার, রেহানা আক্তার রানু, নিলুফার চৌধুরী, এলডিপির চেয়ারম্যান ও সাংসদ অলি আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ও সাংসদ আন্দালিব রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন-উন-নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল মতিন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, বিএনপির সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতন, মোরতাজুল করিম, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া, মহিলা দলের রেহানা আক্তার ওরফে ডলি। তাঁদের মধ্যে শুধু তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার নাম এজাহারে ছিল না।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পারস্পারিক সহযোগিতা ও ষড়যন্ত্র করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। আসামিরা বিস্ফোরকদ্রব্য সংগ্রহে সহায়তা ও আর্থিক সহযোগিতা করেন। তাঁদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতিসাধন ও গণতান্ত্রিকব্যবস্থাকে নস্যাতের জন্য দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে সচিবালয়ে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩, ৩ (ক) ও ৬ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।

No comments

Powered by Blogger.