আকর্ষণীয় গেমস চরিত্র

কেউ আধা মানব-আধা দানব। কেউ ঘটনাচক্রে পেয়ে গেছেন অতিমানবীয় ক্ষমতা। কেউ আবার নিতান্তই সাধারণ রক্তমাংসের মানুষ। যে যেমনই হন, একটা জায়গায় মিল আছে—তাঁদের সবার বিচরণ ভার্চুয়াল জগতে। তাই বলে মানুষের মনে জায়গা নিতেও দেরি হয়নি তাঁদের। সবচেয়ে আকর্ষণীয় কয়েকজন গেমচরিত্র নিয়েই এই আয়োজন।
তাঁদের গেম গ্ল্যামার বললেও ভুল হবে না! লিখেছেন রুহিনা তাসকিন

লারা ক্রফট
টুম রাইডার
ছয় ছয়টা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দখলে তাঁর। ১৯৯৬-এ মুক্তি পাওয়া এ গেমের দারুণ জনপ্রিয়তার ফলেই পরবর্তী সময় আরও সব গেম তৈরি হয় নারী চরিত্রকে মূল ধরে। খাকি শর্টস, বুট, চাপা গেঞ্জি আর পিঠ ছড়ানো লম্বা বেণি। পিস্তল ছুুড়তে দারুণ পারদর্শী। খালি হাতেও কম যায় না। নির্মাতারা চেয়েছিলেন এমন একটা নারী চরিত্র তৈরি করতে, যার মূল আকর্ষণ হবে তাঁর শক্তি। কিন্তু লারাকে নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। লারার অবাস্তব শারীরিক গঠনের জন্য চরিত্রটির নির্মাতাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০০১-এ মুক্তি পায় গেমটির ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র লারা ক্রফট: টুম রাইডার। লারার চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।

গর্ডন ফ্রিম্যান
হাফ লাইফ
মোটা রিমের চশমা, গোটি স্টাইলের দাড়ি আর তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার (থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স) পিএইচডি ডিগ্রি। মুখে নেই কোনো সংলাপ। তার পরও মাত্র দুটো হাফ লাইফ পর্বের পরই ফ্রিম্যান বনে গেছে গেমিং আইকন। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস গেমারস এডিশন ২০১১ তাঁকে রেখেছে সেরা গেম চরিত্রগুলোর তালিকায় আট নম্বরে। বাহারি চুলের স্টাইল, ফোলানো পেশির প্রয়োজন হয়নি গর্ডনের। কোনো কাটসিন বা আগের কথাও বলা হয় না তাঁর সম্পর্কে। গেমটির সবকিছু গর্ডনের চোখেই দেখতে পান খেলোয়াড়েরা। এর ফলে গর্ডনকেও দেখা যায় না পুরোপুরি। আর চরিত্রটির ডিজাইনার গেব নেওয়েল ঠিক এই ব্যাপারটিই চেয়েছিলেন। পাঠকেরা যাতে তাঁদের মতো করেই কল্পনা করে নিতে পারেন তাঁদের নায়ক গর্ডনকে।

এজেন্ট ফরটি সেভেন
হিটম্যান
নিখুঁত খুনি তিনি। এটাই তাঁর পেশা। গতি, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি—সবই তাঁর আছে। নাম নেই তাঁর। নম্বরটাই পরিচয়। নায়ক নন, খলনায়ক তিনি। তবে কখনো কখনো তাঁকে দেখা যায় টার্গেটের আশপাশের মানুষদের বাঁচাতে তৎপর হতে। তাই বলে তাঁকে হূদয়বান অপরাধীও বলা যাবে না।

লিওন কেনেডি
রেসিডেন্ট ইভিল ২
এই গেমে পোড় খাওয়া, শক্তপোক্ত ক্রিস রেডফিল্ডের চরিত্রের বিপরীতে কাউকে আনার ভাবনা থেকে লিওনের সৃষ্টি। তরুণ, অনভিজ্ঞ এক পুলিশ কর্মকর্তা, চাকরির শুরুতেই যিনি পড়ে যান জোম্বিদের মুখোমুখি। অনুভূতিশূন্যতা নয়, বরং ভয়ংকর মুহূর্তে লিওনের অভিব্যক্তি অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য করা হয়েছে। আর এ জন্যই বোধ হয় এতটা প্রিয় হয়ে উঠেছেন লিওন। দু-দুটো হলিউডি সিনেমাও তৈরি হয়ে গেছে তাঁকে নিয়ে। তবে রেসিডেন্ট ইভিল ৪-এ ভিন্নমাত্রা পেয়েছেন লিওন। সরকারের গোপন এজেন্টে হিসেবে খোদ প্রেসিডেন্টের মেয়েকে উদ্ধার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

জিল ভ্যালেন্টাইন
রেসিডেন্ট ইভিল
লারা ক্রফটের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে জিল। নারী ও পুরুষ—সব গেমারদের কাছেই জিলকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন নির্মাতারা। সৌন্দর্য আর শক্তি দুটোই সমানভাবে ধারণ করে জিল। সেরা গেম-সুন্দরী হিসেবে নানা তালিকায়ই জায়গা পেয়ে গেছে জিল।

প্রিন্স অব পার্সিয়া
প্রিন্স অব পার্সিয়া
ঢোলা পাজামা, এলোমেলো চুল আর উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টির সেই ছটফটে তরুণ নয়। এখানে বলা হচ্ছে, ২০০৩ সালে শুরু হওয়া স্যান্ডস অব টাইম ট্রিলজির প্রিন্সের কথা। তবে এই প্রিন্সের আর দুটো রূপও কম আকর্ষণীয় নয়। ওয়ারিয়র আর থ্রোন সিরিজের প্রিন্স বুঝি আরও একটু শক্ত হূদয়ের।

নাথান ড্রেক
আনচার্টেড: ড্রেকস ফরচুন
জিনস আর শার্ট পরা, সাদামাটা চেহারার ড্রেককে নায়ক নয়, বরং বন্ধুর মতোই মনে হতে পারে। আর এটাই তাঁর জনপ্রিয়তার কারণ। দৌড়ানোর সময় হোঁচট খাওয়া, পরিস্থিতির অবিশ্বাস্যতা স্বীকার করে নেওয়া—এসব তো অতিমানবের লক্ষণ নয়। ড্রেক তা ননও। প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ থেকে ধনসম্পদ খুঁজে বের করার কাজটাই তিনি করেন দারুণ বিশ্বাসযোগ্যভাবে। চোখে পড়ার মতো চেহারা বা শারীরিক গঠন না থাকতে পারে তাঁর, তবু তাঁর আকর্ষণ এড়ানো যাবে না।

নাওমি হান্টার
মেটাল গিয়ার সিরিজ
নায়কের সুন্দরী সঙ্গী হিসেবে নয়, নাওমিকে চিনতে হবে জিনতত্ত্বের ডক্টরেট ডিগ্রিধারী গবেষক হিসেবে। সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও মনেপ্রাণে সে ঘৃণা করে যুদ্ধ। জিনবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও নিজের জিন সম্পর্কে কিছুই জানা নেই তার।

ফারাহ্
প্রিন্স অব পার্সিয়া
তির-ধনুকে দারুণ পারদর্শী ভারতের এই রাজকন্যা। প্রিন্সের সঙ্গী হয়ে নয়, বরং প্রিন্সের সমান্তরালে দাঁড়িয়েই লড়াই করে ফারাহ্। মানসিকভাবেও প্রচণ্ড দৃঢ় সে। ভক্তদের মতে, সে-ই প্রিন্সের যোগ্য সঙ্গী হতে পারে।

সেফিরথ
ফাইনাল ফ্যান্টাসি সেভেন
নায়ক হয়তো ক্লাউড, কিন্তু এই গেমের তারকা বলতে হবে সেফিরথকেই। ক্লাউড স্ট্রাইফের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলো এই সেফিরথ। তলোয়ারের ধার তারও কম নয়। পৃথিবীর আধিপত্য পাওয়ার নেশায় সামনে যাকে পাবেন, তাকেই কচুকাটা করবেন তিনি। কিন্তু খুনি বলে কি ঘৃণা করা যাবে তাঁকে?

ক্লাউড স্ট্রাইফ
ফাইনাল ফ্যান্টাসি সেভেন
বিশাল তলোয়ারধারী স্পাইকি ব্লন্ড চুলের এই তরুণের মনোজগতটা বিচিত্র। শুরুতে ভাড়াটে খুনি হিসেবেই দেখানো হয় তাঁকে। পরে প্রকাশ পায় তাঁর স্মৃতিভ্রমের কথা। আস্তে আস্তে স্মৃতি ফিরে পেয়ে তিনি অস্ত্র ধরে খলনায়ক সেফিরথের বিরুদ্ধে, পৃথিবীকে রক্ষার উদ্দেশ্যে। নিজের মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আর অতীতের কথা ভুলে সামনে এগিয়ে যান তিনি। নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতও করেন তিনি। চরিত্রটা কিছুটা ট্র্যাজিক হলেও, তাঁর চুলের স্টাইল, পোশাক নিয়ে মাতামাতি হয়েছে অনেক।

টিফা লকহার্ট
ফাইনাল ফ্যান্টাসি সেভেন
লারার সঙ্গে তুলনা হয়েছে টিফারও। তবে দুজনের মধ্যে অমিলটাই বেশি। ক্লাউডের ছোটবেলার বন্ধু তিনি। তাঁকে মানসিকভাবে শক্তি জোগানোর দায়িত্বটা অনেকটা টিফারই। চরিত্রের গভীরতাও তাঁর অনেকটা বেশি অন্য নায়িকাদের তুলনায়। এ কারণে গেমারদের মনেও বড় জায়গা দখল করে রেখেছে টিফা।

দান্তে
ডেভিল মে ক্রাই
রুপালি চুলের আড়াল থেকে উঁকি দেয় তাঁর ঠান্ডা চোখ, বাতাসে উড়তে থাকে লাল ট্রেঞ্চকোটের প্রান্ত, দুই হাতে ধরা থাকে ইবোনি আর আইভরি নামের দুটো গান। এই হলো আধা মানুষ-আধা শয়তান দান্তে। ডিমন বা শয়তান বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি পেয়েছেন অতিমানবীয় নানা ক্ষমতা। তবে তা তিনি কাজে লাগান শয়তানদের নাশ করার জন্যই। নির্মাতা চেয়েছিলেন ‘কুল আর স্টাইলিশ’ এক চরিত্র। দান্তে সে দিক দিয়ে পুরোপুরি সফল। এমনকি এই গেমের নারী চরিত্রগুলোর চেয়েও সুদর্শন আর আকর্ষণীয় বলা হয় দান্তেকে।

No comments

Powered by Blogger.