ঢাকাকে নিতে হবে ঢাকার বাইরে!-যানজটে ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয়

পৃথিবীর অনেক বড় শহর মূলত অফিসভিত্তিক। বাসিন্দাদের অনেকেই বাস করে বাইরে। ঢাকা নগরীর জন্যও এমন ব্যবস্থা করা যায়। ঢাকাকে পাঠানো যায় ঢাকার বাইরে! ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ স্থাপন করলে মানুষকে রাজধানীতে থাকতে হবে না।


আর ওই সব জেলায় যাতে সন্তানদের শিক্ষার জন্য ভালো প্রতিষ্ঠান থাকে, এ জন্য রাজধানীতে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। সরকারি রেললাইনে বেসরকারি খাতকে রেল চালানোর অনুমোদন দিলে অনেক ট্রেন চালানো যাবে। যাত্রীসেবাও বাড়বে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ ধরনের পরামর্শ দেন।
সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশে যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার ফলে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়। এই টাকা দিয়ে প্রতিবছর একটি করে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। যানজট দেশের অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে, মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ করে তুলছে। শুধু ঢাকায় যানজটের কারণে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম। তথ্যের উৎস বিভিন্ন গবেষণা ও নিজস্ব হিসাব।
সেমিনারে বক্তারা যানজট নিরসনের জন্য যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সড়কের চেয়ে জলপথ ও রেলপথকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য শেয়ারবাজারে বন্ড ছাড়া ইত্যাদি পরামর্শ দেন। 'ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে যোগাযোগ, অবকাঠামো এবং কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থার ভূমিকা' শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। এতে যোগাযোগ ও রেলপথ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রতিনিধি তাকাও তোডা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, যানজটের কারণে বছরে প্রায় ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এর ৪০ শতাংশ ব্যবসায়িক কর্মঘণ্টা। তিনি যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে 'অবকাঠামো বন্ড' চালুর পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি সরকারের খরচও কম হবে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, অর্থ বাংলাদেশের কোনো সমস্যা না। এমএলএম কম্পানিগুলো পাঁচ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারলে সরকার কেন পারবে না। তিনি বলেন, 'ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগলে আমি কখনোই ঢাকায় থাকতাম না। চট্টগ্রামে আমার একটা সুন্দর বাড়ি আছে। সেখানে অনেক ভালো থাকতে পারতাম। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, থাইল্যান্ডে এমনই হয়। এসব দেশের বড় শহরে মানুষ থাকে কম। বেশি থাকে শহরের পাশে। ঢাকার পাশে উপশহর গড়তে হবে। ঢাকাকে ঢাকার বাইরে নিতে হবে।'
একই রকম মত দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকার আয়তনের মাত্র ৭ শতাংশ রাস্তা আছে। এটা দিয়ে এত বেশি গাড়ি ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব নয়। এ জন্য ঢাকায় মানুষ আসা কমাতে হবে। আর ঢাকার আশপাশের সঙ্গে দ্রুতগতির গণপরিবহনের ব্যবস্থা করে মানুষের চাপ কমানো সম্ভব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'মন্ত্রী হিসেবে আবার অনেক কিছু করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই। এ জন্য আমরা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে করার চেষ্টা করছি।' তিনি জানান, তাঁর গুরুত্বের তালিকায় এখন আগামী বর্ষায় চলাচলের জন্য সড়ক মেরামত ও ট্রেন সময়মতো চলা শীর্ষে আছে। তবে ২০১৩ সালের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের সড়কের কাজ শেষ করা এবং এ সরকারের মেয়াদে পদ্মা সেতু ও ঢাকার ভেতরে প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করা হবে।
মন্ত্রী জানান, কবরস্থান সরানো, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া ও আরো কিছু জটিলতায় চার লেনের প্রকল্পের কাজ থমকে ছিল। তবে এবারের বাজেটে ভালো অঙ্কের টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাবে। অন্যান্য জটিলতা দূর করার ব্যবস্থা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও ১৮টি মসজিদ ও মাদ্রাসার সমস্যা ছিল। পরে চার কিলোমিটার কমিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ ৯ মাসের মধ্যে শুরু করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'একজনের জন্য তারা (ঋণদাতারা) ১৬ কোটি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। একজন ওবায়দুল কাদের দোষ করলেও শাস্তি পাচ্ছে দেশের সব মানুষ।'

No comments

Powered by Blogger.