ব্যাংকার্স বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক-মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামানো বড় চ্যালেঞ্জ

মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একে প্রাধান্য দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে। তাতে মুদ্রা সরবরাহের রাশ টেনে ধরতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যপ্রবাহ কমে গেছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের ব্যাংকার্স বৈঠকে গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাখ্যা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এখন বিলাসসামগ্রী বা অনুৎপাদন খাতে অর্থ জোগান দেওয়ার সময় নয়। কিন্তু, উৎপাদন খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য ঋণ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।
অন্যদিকে কতগুলো ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ব্যবধান ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি রয়েছে, যা কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি নুরুল আমিন সাংবাদিকদের বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করেন।
এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে তারল্য সংকট আছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বিধিবদ্ধ জমার (স্টেটিউটরি লিকুইডিটি রিকোয়ারমেন্ট বা এসএলআর) চেয়ে প্রাথমিক ডিলার (পিডি) ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ১৬ হাজার কোটি টাকা ট্রেজারি বিল বা বন্ডে আটকে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে বিল-বন্ড ছেড়ে এ অর্থ বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। এতে করেই তারল্য পরিস্থিতিতে চাপ তৈরি হয়েছে।
সুর চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকার রেপো বা স্বল্প মেয়াদে বাজারে অর্থ জোগান দিচ্ছে। একই সঙ্গে কীভাবে আরও কিছুটা অর্থপ্রবাহ বাজারে বাড়ানো যায়, তা ভাবা হচ্ছে।
রেপো বা স্পেশাল রেপো দেওয়া হয় এক দিনের মেয়াদে। তাতে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে পারে ব্যাংকগুলো। কিন্তু এই অর্থ নতুন করে ঋণ বিতরণে ব্যবহার করতে পারে না ব্যাংক।
অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ইতিমধ্যে অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক দিক তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারের ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা থেকে ঋণ কমে ১৬ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। প্রবাসী-আয় বেড়েছে। রিজার্ভ পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। টাকার মূল্যমান কিছুটা বেড়েছে।
ডেপুটি গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংকগুলোকে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ কমাতে বলা হয়েছে। এতে অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমবে। ব্যাংকগুলো এর সঙ্গে একমত হয়েছে। তিনি বলেন, এবিবি আমানত ও ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করেছে। এটা তারা বাজার শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য করে থাকতে পারে।
নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিকে ব্যাংকগুলো স্বাগত জানিয়েছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেভাবেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকগুলোতে কোনো সংকট নেই, তবে চাপ আছে। ব্যাংকের কাছে টাকা আছে, তবে তা নগদে নেই।
নুরুল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে এমন খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে বলেছে। অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করতে পরামর্শ দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.