স্ত্রী ও দুই মেয়ে শ্রীলঙ্কা পালিয়েছেন-মালদ্বীপে নাশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

মালদ্বীপের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে শ্রীলঙ্কায় পালিয়ে গেছেন। নাশিদের সমর্থকেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস বিক্ষোভ করছে। থানা ও সরকারি অনেক ভবন জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আদ্দু সিটিতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।


বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নাশিদ গতকাল বলেন, ‘তারা আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। বলা হয়েছে, আমিই হব মালদ্বীপের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাঁকে পদত্যাগের পর সারা জীবন কারাগারে কাটাতে হবে।’ তিনি আরও জানান, আশা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টি দেখবে এবং এ ব্যাপারে এখনই কিছু একটা করবে।
নাশিদের মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) জ্যেষ্ঠ নেতা আদম গফুর জানান, মোহাম্মদ নাশিদ ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর (সাবেক) নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে দেশটির পুলিশ-প্রধান আবদুল্লাহ রিয়াজ বলেন, নাশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের মুখপাত্র বান্দুলা জয়াসেকেরা জানান, মোহাম্মদ নাশিদের স্ত্রী ও তাঁর দুই মেয়ে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁরা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়ে অবগত আছেন। নাশিদের পরিবারের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা শ্রীলঙ্কায় আছেন...মালদ্বীপে থাকার চেয়ে শ্রীলঙ্কা নিরাপদ।’
নাশিদের পদত্যাগের পরদিন গত বুধবার দেশটিতে সহিংসতা শুরু হয়। বুধবার রাতভর সহিংসতা চলে। নাশিদের ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা থানা, সরকারি ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আদ্দু সিটিতে ব্যাপক সহিংসতা চলে। আদ্দু সিটির মেয়র আবদুল্লাহ সোডিং বলেন, এখানে বেশ কয়েকটি থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবনের পর ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তিনি জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশটির পুলিশ-প্রধান আবদুল্লাহ রিয়াজ বলেন, বিক্ষোভকারীরা ১৮টি থানা ভাঙচুর করার পর জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়া অসংখ্য আদালত ও সরকারি ভবনে লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
বুধবার রাজধানী মালেতে নাশিদের সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ও সেনা সদর দপ্তরের সামনে এসব সংঘর্ষ চলে।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়। তবে নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসান জাতীয় মতৈক্যের ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা গঠনের কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জামিল আহমেদ বলেন, ‘যা ঘটছে তা সত্যিই লজ্জাজনক, আধুনিক মালদ্বীপের ইতিহাসে এটা দুঃখজনক ঘটনা।’
মালদ্বীপে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নাশিদ গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এবং কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিদ্রোহের কারণে পদত্যাগ করেন তিনি। তবে পরে তিনি বলেন, তাঁকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসান। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় মতৈক্যের সরকার ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার কথা। এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.