বিদ্যুতের দাম ও পল্লী বিদ্যুৎ-নিশ্চিত হোক উৎপাদন ও সরবরাহ

অনেক সমস্যার ভিড়ে বাংলাদেশে এখনো অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ সংকট থেকে কোনোভাবেই মুক্তি মিলছে না। সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে বিদ্যুৎ। মাঝখানে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতেই নেওয়া হয়েছিল এ ব্যবস্থা। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। লোডশেডিং এখনো আছে।


অতিসম্প্রতি লোডশেডিংয়ের মাত্রা শহরাঞ্চলে অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে এলেও গ্রামাঞ্চলে অবস্থা আগের মতোই। সেখানে চলছে তীব্র লোডশেডিং। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা বিদ্যুতের জন্য বেশি মূল্য দিলেও বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাদের। শহরাঞ্চলের, বিশেষ করে রাজধানীর বিদ্যুৎ পরিস্থিতিতে যে কারোই মনে হতে পারে, বিদ্যুৎ সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। এ কথাও ঠিক, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যেখানে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করা হয়নি, সেখানে এ আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বেড়েছে। তবে এখন চাহিদা কতটা পূরণ হচ্ছে, সেটাই দেখার বিষয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। বর্তমানে সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে চার হাজার ৮৯০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (১৯৯৬-২০০১) স্থাপন করা ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ২০৮ মেগাওয়াট এবং ২০১১ সালের জুনের মধ্যে স্থাপিত ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ৯২২ মেগাওয়াটসহ মোট তিন হাজার ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে স্থাপিত সরকারি-বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা মোট ৬২টি এবং উৎপাদনক্ষমতা ছয় হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। নির্মাণাধীন ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি আরো ৩৪টি নতুন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। নির্মাণাধীন ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আরো তিন হাজার ৩০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু তেমন আশার বাণী শোনা যাচ্ছে না সরবরাহের ক্ষেত্রে। শহরাঞ্চলে যখন বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেকটা কমে এসেছে, তখন গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি থেকে যাচ্ছে আয়ত্তের বাইরে। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না বলে জানা গেছে। কখনো কখনো, কোথাও কোথাও টানা দুুই দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। পল্লী বিদু্যুতায়ন বোর্ডের ৯০ লাখ গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট, যা দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকেরও বেশি। ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম বেশি দিয়েও পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা নিজেদের সরবরাহের নিশ্চয়তা পায় না। আবার শহরাঞ্চলে আসন্ন রমজানে লোডশেডিং বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে রাজধানীর সিএনজি স্টেশনগুলো আরো দুই ঘণ্টা বেশি বিদ্যুৎবিহীন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এ অবস্থায় আগামী আগস্ট মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এতে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে ভোক্তা পর্যায়েও দাম বাড়বে। অর্থাৎ গ্রাহকদের ঘাড়েই শেষ পর্যন্ত বাড়তি দামের বোঝা চাপবে। সামনে রমজান আসছে। রমজানে যেন লোডশেডিং নতুন সংকট সৃষ্টি না করে। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়তি দাম হয়তো মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সরবরাহ নিশ্চিত না করে দাম বাড়ানো হবে কেন! সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।

No comments

Powered by Blogger.