কাজ না দেখেই বিরোধিতা কেন?-নতুন নির্বাচন কমিশন

সাবেক সচিব কাজী রকিব উদ্দিন আহমদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া চার কমিশনার পদে নিয়োগ পেয়েছেন যথাক্রমে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল মোহাম্মদ জাভিদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ।


নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তাতে এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে, তারা আগেই ঠিক করে রেখেছিল, যিনি বা যাঁরাই কমিশনে নিযুক্ত হোন না কেন, তারা মানবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা কমিশন গঠনের পুরো প্রক্রিয়াটিই প্রত্যাখ্যান করছেন। এই কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠনে বিরোধী দলের এই নেতিবাচক মনোভাব কাম্য নয়। বিতর্ক এড়ানোর জন্য যেখানে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হলো, সেখানে বিরোধী দলের প্রত্যাখ্যান দুর্ভাগ্যজনক। অনুসন্ধান কমিটি গঠনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকলে বিএনপি সংশোধনের প্রস্তাব দিতে পারত, কমিটির কাছে নাম পাঠিয়ে পরখ করে দেখতে পারত সত্যি সত্যি তারা আমলে নেয় কি না। কিন্তু সেসব না করে নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করে তারা রাজনীতিকে সংঘাত ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল।
বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে যে আন্দোলন করছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন তার সঙ্গে কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। জাতীয় নির্বাচনকালে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয়তা বিরোধী দল কী করে অস্বীকার করবে? যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নিই, তাদের দাবি অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো, তারপর নির্বাচনটি কে করবে? সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন করা নয়। এ কাজটি কিন্তু নির্বাচন কমিশনকেই করতে হবে।
নতুন নির্বাচন কমিশনে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। তাঁরা দলীয় না নিরপেক্ষ, সেটি প্রমাণের জন্যও তো কিছুটা সময় দিতে হবে। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তিনি এই দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। আমরাও মনে করি, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার কাজটি সহজ নয়। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা না পেলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এই গুরুদায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অতএব, রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার উচিত হবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনের এখনো প্রায় দুই বছর বাকি। আমরা বিরোধী দলকে বলব, আগে তাদের কাজকর্ম দেখুন, বিচার-বিশ্লেষণ করুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন। কাজ শুরুর আগেই বিরোধিতা কেন?

No comments

Powered by Blogger.