দর্শকদের টানতেই পারল না বিপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

তুলনাটা ঘুরেফিরে আসছে। বলা ভালো, কর্তাব্যক্তিরাই নিয়ে আসছেন তা। ২০১১ বিশ্বকাপ আয়োজনে সফলতার তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও (বিপিএল) তেমন 'ফাটানো' কিছু হবে, তাঁদের বিশ্বাস। কিন্তু সকালের সূর্য যদি দিনের পূর্বাভাস দেয়, তাহলে সর্বনাশ! কাল বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইঙ্গিত দিচ্ছে নিজেরাই 'ফেটে' যাওয়ার। ক্রিকেটের মোড়কে নানা মসলার জগাখিচুড়ির ফ্লপ শোর!

মূল কারণটা নিহিত দর্শকে। ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ছিল না তিল ধারণের জায়গা। শুধু কি তাই, স্টেডিয়ামের চারপাশেও ছিল জনসমুদ্র। আর কাল জনবিরল মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে খাঁ খাঁ শূন্যতা। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরুর সময় দর্শকসংখ্যা কত ছিল? মেরে-কেটে হাজার তিনেকও না। এর সিংহভাগই আবার সৌজন্য টিকিটের সৌজন্যে আসা! নূ্যনতম এক হাজার টাকা টিকিটে বিপিএলের বিনোদন নিতে আগ্রহী ছিল না দর্শকরা। শেষে মান বাঁচাতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় গ্যালারি। তাতে হাততালি দেওয়ার কিছু লোক জুটেছে, এই যা!

এমন নয় যে আয়োজনের কমতি ছিল। নাচে-গানে ভরপুর চটকদার এক বিচিত্রানুষ্ঠান হয়েছে। সাড়ে তিন শ কোটি টাকার টুর্নামেন্ট বলে কথা! কিন্তু অনুষ্ঠানজুড়ে ক্রিকেট কতটুকু ছিল, এ প্রশ্ন থাকছেই। অবশ্য টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতেই-বা ক্রিকেট আছে কতটুকুন! অর্থ-বাণিজ্য-গ্ল্যামারের মিশেলে একটুখানি ক্রিকেট- এই তো! সেই যুগে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক প্রবেশ ঘটল কাল। দেশের মূলধারার ক্রিকেটের শিকড় শক্ত না করেই। এমন আয়োজনে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিলেই-বা কী! অনুচ্চারে কর্তারা স্লোগানটা তো সবার জানা- বিপিএল জিন্দাবাদ!
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্য দিতে গিয়ে অবশ্য মুখস্থ বুলি আওড়াতে ভোলেননি। মূল ধারার ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেওয়ার পুরনো কথা নতুন করে আরেকবার বলেছেন তিনি, 'আমাদের ক্রিকেটের নিউক্লিয়াস যে লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেট, সেটিকে অবশ্যই আমরা গুরুত্ব দেব। বিপিএলের কারণে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করার কোনো কারণ নেই।' টোয়েন্টি-টোয়েন্টির এই উৎসবকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁকবদল হবে বিপিএল দিয়ে!
সাড়ে ৬টার এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে প্রায় ৩৫ মিনিট পর। শুরুতেই শিশুশিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গান। এরপর বিপিএলের থিম সং 'যুদ্ধ শুরু ব্যাটে-বলে, ২২ গজে আগুন জ্বলে' গেয়ে যান কুমার বিশ্বজিৎ, বাপ্পি লাহিড়ী ও শান। অনেকক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা দলগুলো এরপর মাঠে প্রবেশ করে। ঢাকা দলের অধিনায়ক মাশরাফির অনুপস্থিতি আগের দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সন্দেহের জন্ম দিলেও তাঁর অনুপস্থিতির কারণ দল বিমানের প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ। সেটা শেষ করে পরে এসে যোগ দিয়েছেন তিনি। দলগুলো মাঠে ঢোকার পর বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট গাজী আশরাফ হোসেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের পর বিপিএলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। পরের অংশটুকু বিচিত্রানুষ্ঠানের জন্য। সেখানে ছিল আইয়ুব বাচ্চু, মাইলস, মিলাদের গান, শিবলী-নীপার নাচ, শাকিব খান-অপু বিশ্বাস, ঋতুপর্ণ ঘোষ, মালাইকা, বিপাশা বসুদের পারফরম্যান্স। হয়েছেন আতশবাজি। 'ফাও' ঢোকা দর্শকরা তাতে তালও মিলিয়েছেন ঢের।
বিপিএলের এই আয়োজনে তীব্র আলোর ঝলকানি আছে, কিন্তু সেই আলোয় কতটা আলোকিত হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট? আছে অর্থের প্রাচুর্য, কিন্তু সেটি ক্রিকেট উন্নয়নে কাজে লাগবে নাকি শুধু পকেট ভারী করবে মৌসুমি হর্তাকর্তাদের? নানা রং আছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কি রঙিন হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এহেন নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েই অনুষ্ঠিত হলো কাল বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.