নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের ভাষ্য-দক্ষিণ এশিয়ার জিহাদে আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশি জঙ্গিরা

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আল-কায়েদা ও তালেবানের জিহাদে যোগ দিতে বিদেশি জঙ্গিরা আগ্রহ হারাচ্ছে। পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা এ কথা বলছেন। কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি জঙ্গিদের এ অঞ্চলের জিহাদে বিমুখ হওয়ার কারণগুলো হলো: আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়া, সংগঠনটির তহবিল-সংকট ও মার্কিন চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন থেকে অব্যাহত হামলা।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ফরাসি নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, কতজন বিদেশি জঙ্গি এখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে লড়াই করছে বলা মুশকিল। তবে এটা পরিষ্কার, এই সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য তিনি সতর্ক করে দিয়ে এ-ও বলেন, পাকিস্তানে অনেকেই নতুন করে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তারা বিদেশি জঙ্গিদের এই শূন্যস্থান পূরণ করবে।
ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানে জিহাদে অংশ নেওয়া ফরাসি জঙ্গিদের প্রায় সবাই গত ছয় মাসে সে দেশ ছেড়ে গেছে। সেখানে ২০ থেকে ৩০ জন ফরাসি ছিল। ইউরোপের অন্য দেশ থেকেও পাকিস্তানের জিহাদে অংশ নেওয়া আল-কায়েদা জঙ্গিদের সংখ্যা কমেছে।
ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরও বলেন, বিদেশি জঙ্গি কমে যাওয়ার পেছনে আরব-বসন্তও একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফিবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে অনেক বিদেশি পাকিস্তান ছেড়েছে। এ ছাড়া বিদেশি জঙ্গিদের কাছে আফগানিস্তানের জিহাদ অনেকখানি আকর্ষণ হারিয়েছে। এর কারণ আফগান তালেবান জঙ্গিরা নিজ দেশেই জিহাদ করতে বেশি আগ্রহী। বিশ্ব জিহাদের ব্যাপারে তাদের উৎসাহ মোটেও নেই। এ কারণে বিদেশি জঙ্গিরাও তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি ইনস্টিটিউটের জন্য লেখা ‘ফরেন ফাইটারস’ নামের একটি গ্রন্থের সহ-লেখক ফ্রাংক কিলাফো বলেছেন, ড্রোনসহ অব্যাহত সামরিক হামলার কারণে আল-কায়েদা ও তালেবান জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারণে বিদেশি জঙ্গিরা ওই সব এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছে।
গোয়েন্দা বিমান ও কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে নজরদারি জোরদার করায় পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানসহ অন্যান্য এলাকার জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলো এখন খোলা জায়গার বদলে ভবনের ভেতরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকার সঙ্গে পাশ্চাত্যের জঙ্গিদের যোগাযোগের ওপর ‘জঙ্গি সরবরাহ ব্যবস্থা’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে গবেষক পল ক্রুইকশ্যাংক পাকিস্তানভিত্তিক আল-কায়েদার মুখপাত্র ওস্তাদ আহমাদ ফারুকের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ফারুক বলেন, ‘মাথার ওপর চক্কর দিচ্ছে ড্রোন। আমাদের বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করায় নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজ দুরূহ হয়ে পড়েছে। লাদেন একটা ব্র্যান্ড হিসেবেই গণ্য হতেন।’
উত্তর ওয়াজিরিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান তরুণ হাফিজ হানিফও নিউজউইক সাময়িকীকে সম্প্রতি বলেছেন, ওই এলাকায় বিদেশি জিহাদিদের সংখ্যা কমে গেছে। হাফিজ হানিফ বলেন, ‘জিহাদে যোগ দিতে নতুন মুখ আসা মানেই নতুন রক্ত, উদ্যম আর অর্থের আগমন ঘটা। এখন সবই বন্ধ। পুরোনো যোদ্ধারাই এখন জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.