বাঙালি সমগ্র জাদুঘর by তারিক রহমান সৌরভ

১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে বাঙালি সমগ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে নবম বর্ষে পদার্পণ করল এই জাদুঘর। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারাকে সমৃদ্ধ করতে যেসব কীর্তিমান বাঙালি বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের সৃষ্টি ও কর্ম সংগ্রহ, স্থায়ী সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের লক্ষ্যে এই জাদুঘর যাত্রারম্ভ করে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।


ঢাকার ২৩৫/২, এলিফ্যান্ট রোডে খায়ের ম্যানসন ভবনে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দুই হাজার বর্গফুট আয়তনের এই জাদুঘরে রয়েছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত বিশিষ্ট বাঙালির চারটি ভাগে বিভক্ত মোট ৬০টি পোর্ট্রেট। বিভাগগুলো হলো_ ১. ভাষা শিক্ষা সাহিত্য; ২. সঙ্গীত নাটক চলচ্চিত্র ক্রীড়া; ৩. সমাজ রাজনীতি অর্থনীতি ও ৪. বিজ্ঞান স্থাপত্য শিল্পকলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আফজাল পোর্ট্রেটগুলো এঁকেছেন।
যাত্রালগ্নে ২০০৪ সালে মাত্র বিশটি মূল স্মারক নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই জাদুঘরের বর্তমান স্মারক সংখ্যা ৬০টি। জাদুঘরে আসা প্রতিদিন দর্শকরা অবাক হয়ে দেখেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি বাংলা ও ইংরেজি কবিতার মূলকপি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ধূমকেতু (১৯২২_ কলকাতা থেকে প্রকাশিত) পত্রিকার মূলকপি, বেগম রোকেয়ার হাতের লেখা চিঠি, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর গানের স্বরলিপি, শিল্পী আবদুল লতিফের ব্যবহৃত দোতারা, চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের মুভি ক্যামেরা, প্রথম বাঙালি মুসলমান চিত্রকর কাজী আবুল কাশেমের আঁকা তৈলচিত্র, পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা স্কেচ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য দুর্লভ স্মারক ও বিশিষ্ট বাঙালির হাতের লেখা, বিভিন্ন চিঠি ও পাণ্ডুলিপি। ২০০৪ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট বাঙালির জীবন ও কর্মভিত্তিক সাক্ষাৎকারমূলক তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছে বাঙালি সমগ্র জাদুঘর। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পূর্তিতে www.bangaleeshamagra.org ওয়েবসাইট উদ্বোধন করে বাঙালি সমগ্র জাদুঘর। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা শিকড়সন্ধানী, সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালি প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ও মতামত পাঠাচ্ছেন উদ্যোক্তাদের কাছে। গত আট বছরে চারটি প্রকাশনা নিয়ে এসেছে বাঙালি সমগ্র জাদুঘর। আগামীতে আরও তিনটি প্রকাশনার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে দুই হাজার বর্গফুট স্বল্পায়তন স্থানে বাঙালি সমগ্র জাদুঘর এর সামগ্রিক কাজকর্মের পূর্ণতা দান এখন আর সক্ষম নয়। সরকারপ্রধানের কাছে এই জাদুঘরের স্থায়ী কাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে ঢাকা শহরে এক খণ্ড জমি বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে এবং আনুষঙ্গিক ব্যয়, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে অনুদানের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সরকার এই আবেদনগুলো সহৃদয় বিবেচনার মাধ্যমে যথাযথভাবে পূরণ করবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে এই প্রত্যাশা করছি।

তারিক রহমান সৌরভ :নির্বাহী পরিচালক, বাঙালি সমগ্র জাদুঘর

No comments

Powered by Blogger.