বৈঠকের খবরে ঘুরে গেল মূল্যসূচক

শেয়ারবাজারে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আজ মঙ্গলবার বৈঠক ডেকেছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এই বৈঠকের খবরে গতকাল সোমবার লেনদেন শেষে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচক বেড়েছে। বৈঠকের খবর প্রচার হওয়ার আগেও বাজারে দরপতন ছিল।


২০১০ সালের শেষের দিকে শেয়ারবাজারে ধস নামার পরও তৎকালীন কমিশন একের পর এক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠকে বসে। কমিশনের পরামর্শে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের তাৎক্ষণিক প্রভাব হিসেবে কয়েক দিন বাজারের মূল্যসূচক বেড়েছিল। কিন্তু সেটি স্থায়ী হয়নি।
বাজারের প্রথম দফা ধসের পর এসইসি পুনর্গঠন করা হয়। তবে বাজারে দরপতন অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে দরপতন ঠেকাতে গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এসইসি কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
এত কিছুর পরও দরপতনের ধারা বজায় থাকে। মাঝে মাঝে বাজার বাড়লেও বেশির ভাগ সময়ই দরপতন ঘটতে থাকে। টানা দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক এখন প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি নেমে এসেছে।
এমতাবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে এসইসি। কমিশন পুনর্গঠনের পর বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ ধরনের বৈঠক এটাই প্রথম। অবশ্য গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ধারাবাহিকতায় অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে কমিশন কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তাতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি), ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি), দুই স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ লেনদেনকারী পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউস, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান নির্বাহী বা তাঁদের মনোনীত প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের বৈঠক আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
যোগাযোগ করা হলে এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার হস্তক্ষেপের কারণে বাজারকে আমরা তার আপন শক্তিতে দেখতে পাচ্ছি না। এক বছর ধরেই এ অবস্থা চলছে। আমি মনে করি, কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া বাজারকে বাজারের মতো করে চলতে দেওয়া হলে সেটি তার নিজস্ব গতি ফিরে পেত। কিন্তু এত দিনেও সেটি হলো না।’
ফারুক সিদ্দিকী আরও বলেন, একেক সময়ে একেকটি সিদ্ধান্ত বা হস্তক্ষেপের কারণে কৃত্রিমভাবে বাজার কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী হলেও শেষ পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়নি। বরং বাজারে অস্থিরতা চলমান থাকায় প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা দূরে সরে আছেন। বিনিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বাজারের স্থিতিশীলতা দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক: গত রোববার দেশের শেয়ারবাজারে বছরের সর্বোচ্চ দরপতন ঘটে। ওই দিনই ডিএসইর সাধারণ সূচক নেমে আসে চার হাজার ১৮৩ পয়েন্টে। সর্বোচ্চ দরপতন ও বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার রাতেই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে বৈঠকে বসে এসইসি। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক চলে। যদিও বৈঠকের বিষয়ে কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাজার-পরিস্থিতি: মূল্যসূচকের পতন দিয়েই গতকাল ঢাকার বাজারে লেনদেন শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত ঢাকার বাজারে মূল্যসূচকের উত্থান-পতন চলতে থাকে। দুপুরের পর এসইসির আজকের বৈঠকের খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়লে সূচক দ্রুত বাড়তে থাকে। দিনের শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১০৩ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৮৬ পয়েন্টে।
গতকাল ঢাকার বাজারে প্রায় ২২৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৫ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারে ৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে তিন কোটি টাকা কম।

No comments

Powered by Blogger.