সাইবার নিরাপত্তায় নজর দিন-সন্ত্রাসবাদ by এহতেশামুল হক

গ ত সপ্তাহের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে যে কয়েকটি আলোচিত খবর ছিল তার মধ্যে মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর, প্রার্থিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও ট্রানজিট চুক্তি না হওয়া এবং সফরের শেষ পর্যায়ে দিলি্লর হাইকোর্ট ভবনের প্রবেশপথে শক্তিশালী বোমা বিস্টেম্ফারণে ১২ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ১০০ জনের মতো লোক আহত হওয়ার খবর অন্যতম।


সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কীভাবে সাইবার স্পেস তথা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, দিলি্ল হাইকোর্ট ভবনের প্রবেশপথে গত সপ্তাহের বোমা হামলা তা আবার প্রমাণ করল। জম্মু, কাশ্মীর ও কিশোয়ারের সাইবার ক্যাফে থেকে দুটি সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো ই-মেইলে হামলার পেছনে উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়। হরকাতুল জিহাদ-আল-ইসলামী (হুজি) নামক সংগঠনের পক্ষ থেকে যধৎশধঃঁষলরযধফ২০১১@মসধরষ.পড়স ই-মেইল ব্যবহার করে গ্গ্নোবাল ইন্টারনেট সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে একটি ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল এবং দ্বিতীয় ই-মেইলটি এসেছিল বৃহস্পতিবার ওহফরধহ গঁলধযরফরহ-এর কাছ থেকে। পুলিশ সাইবার ক্যাফেটির মালিক ও তার ভাইকে আটক করেছে এবং সাইবার ক্যাফে ব্যবহারকারীদের তালিকা ও অন্যান্য নথিপত্র তদন্ত করছে। আশা করা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। কিন্তু সাইবার স্পেস এবং ইন্টারনেট ক্যাফে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত কঠোর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করে এ সন্ত্রাসী হামলা এবং সন্ত্রাসী হামলায় প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
২৬/১১ মুম্বাই হামলা, ২০০৭-এ ঝধসলযধঁঃধ ঊীঢ়ৎবংং-এ হামলা এবং ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মুম্বাইয়ে হামলার সময়ও সন্ত্রাসী এবং তাদের দোসররা বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করেছে। যদিও এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সাইবার ক্যাফেগুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু চোর পালানোর পর বুদ্ধি বাড়িয়ে আর কতটুকু লাভ হয়? এ নজরদারির প্রচেষ্টা আরও বেগবান হয় এ বছর এপ্রিল মাসে যখন তথ্য-প্রযুক্তি অধিদফতর এপ্রিল মাসের ১১ তারিখে সাইবার ক্যাফেগুলোর জন্য নতুন আইন প্রণীত হয়। এ আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি সাইবার ক্যাফেকে প্রাদেশিক গভর্নরের কাছে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ পদক্ষেপ এবং ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিতকরণের নিয়ম এখনও বাস্তবতার মুখ দেখেনি।
এখনও বেশিরভাগ সাইবার ক্যাফে এসব নিয়ম মেনে চলছে না। বিদ্যমান আইনানুযায়ী প্রত্যেকটি সাইবার ক্যাফে পুরো এক বছরের সব ব্যবহারকারীর ডিজিটাল অথবা শারীরিক পরিচিতির নথিপত্র সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহারকারীদের জন্য অবশ্যই মাসিক ভিত্তিতে একটি নিবন্ধন বই রাখতে হবে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিচরণকৃত ওয়েবসাইটগুলো এবং প্রক্সি সাইটগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনানুসারে নিয়মিত এবং ঝটিকা তদন্তের কথাও বলা হয়েছে। ওপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার, সাইবার ক্যাফে নিয়ন্ত্রণের আইন কঠোর। কিন্তু সাইবার ক্যাফের মালিকরা ব্যবসায়িক স্বার্থে শাস্তির ভয় উপেক্ষা করে আইন অমান্য করছে আর এ জন্য প্রতিনিয়ত প্রাণ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দিলি্লর এ ঘটনাটি প্রমাণ করে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এবং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। ভারতের মতো উন্নত দেশে যদি এ অবস্থা বিরাজ করে তাহলে এটি খুব সহজেই অনুমান করা যায়, বাংলাদেশের অবস্থা কতটুকু ভয়াবহ হতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার সফল করার জন্য আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটার নজির রয়েছে; যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং এটিই উপযুক্ত সময়, সাইবার ক্যাফেগুলোকে নতুন আইনের আত্ততায় নিয়ে আসার এবং তা যথার্থভাবে প্রয়োগ করার। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাতে শুধু ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে সাইবার ক্যাফে ব্যবসার আড়ালে তরুণ-তরুণীদের অবাধে মেলামেশার ব্যবস্থা করে অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে ব্যক্তিবিশেষ। এ ছাড়া আমাদের বর্তমানে যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন আছে সেখানে সাইবার ক্যাফেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো বিধান রাখা হয়নি। শুধু ৬৬ ধারাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কম্পিউটার, ই-মেইলের মাধ্যমে এ আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটন করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হবে। সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পূরণকল্পে এখনই আমাদের সাইবার ক্যাফেগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি। নতুবা এর দায়ভার আমাদের সবার কাঁধেই বর্তাবে।

এহতেশামুল হক : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
sayed.law.seu@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.