বিদ্যালয়ে তিনি একজন!

ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি ছিল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার জোড়গাছা ইউনাইটেড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির। প্রতিবছর এ বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেত একাধিক শিক্ষার্থী। পাঁচ গ্রামের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করত এখানে।

আর এখন কমতে কমতে ১২০ জনে দাঁড়িয়েছে। কারণ, একজন শিক্ষকের এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না বললেই চলে।
বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক গোলজার হোসেন বলেন, ‘একজন মানুষের পক্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম পর্যন্ত পাঁচটি ক্লাস নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। এর ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। চোখের সামনে সোনার সংসারের মতো সাজানো এ বিদ্যালয়টি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ দৌড়ের ওপর থেকেও আমি শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়ালেখা করাতে পারছি না। এক ক্লাসে লিখতে দিয়ে আরেক ক্লাসে যাই। তখন হয়তো অন্য ক্লাসে চেঁচামেচি, নয় তো মারামারি লেগে যায়।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে চারটি। গত বছরের ২১ মার্চ পর্যন্ত চারজন শিক্ষক দিয়েই চলছিল বিদ্যালয়টি। কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে ২০১১ সালের ২২ মার্চ আনসার আলী, ১২ জুন সুধীর চন্দ্র সরকার ও ১৪ ডিসেম্বর আতাউর রহমান অবসরে যান। বর্তমানে শুধু গোলজার হোসেন আছেন, আগামী ২২ জুন তিনিও অবসরে যাবেন। এর মধ্যে নতুন শিক্ষক নিয়োগ না হলে হয়তো বিদ্যালয়টি পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে যাবে।
বিদ্যালয়ের পাশেই দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র তোফায়েলদের বাড়ি। তোফায়েলের বাবা মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ইশকুলটার কত সুনাম ছিল। অথচ মাস্টার নাই দেইখ্যা ইশকুলডা এক্কেরে শ্যাষ হয়া গেল। মাস্টার না থাকায় মাঝেমধ্যেই ছাত্রগরে মধ্যে মারামারি লাইগ্যা যায়। তখন বাড়ির থ্যা দৌড়ায়া আইস্যা মারামারি থামাই।’
সাঁথিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জয়নাল আবেদীন বলেন, একজন শিক্ষক থাকায় বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা চরম ব্যাহত হচ্ছে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ডিসেম্বরে হয়েছে। আশা করছি, মার্চ-এপ্রিলে ওই বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। তবে আপাতত ওই বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.